আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবায় যাওয়ার জন্য প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলিমের মন ব্যাকুল হয়ে থাকে। কিন্তু কাবাঘরে প্রদক্ষিণ করলেও পবিত্র এই ঘরে চাইলেই সবাই প্রবেশ করতে পারে না। এজন্য যেমন অনুমতির প্রয়োজন হয়, তেমনি তালাবদ্ধ থাকার কারণেও কেউ ঢুকতে পারে না পবিত্র কাবাঘরে। শতকের পর শতক ধরে একটি পরিবার বংশ পরম্পরায় পবিত্র কাবাঘরের চাবির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
পবিত্র কাবাঘরের বর্তমান চাবিরক্ষক ছিলেন ড. শায়খ সালেহ আল শাইবা। তিনি স্থানীয় সময় গত শুক্রবার (২১ জুন) বিকেলে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। হারামাইন শরিফাইন নিজেদের ভেরিফায়েড এক্স পেজে এক পোস্ট জানিয়েছে, পবিত্র কাবাঘরের এই অভিভাবকের মৃত্যু হয়েছে। ড. শায়খ সালেহ আল শাইবা হজরত উসমান ইবনে তালহা রাদিআল্লাহু আনহুর বংশধর ছিলেন। ফজরের নামাজ শেষে বায়তুল্লায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে মক্কার জান্নাতুল মুআল্লায় তাকে দাফন করা হয়।
দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শেখ সালেহ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তিনি পবিত্র কাবাঘরের ১০৯তম অভিভাবক (গার্ডিয়ান অব দ্য কাবা) ছিলেন। মসজিদ আল–হারেমে জানাজার পর মক্কার আল–মুয়াল্লা কবরস্থানে শেখ সালেহকে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে খালিজ টাইমস। প্রাক ইসলামী যুগ থেকেই শাইবা গোত্রের কাছে কাবাঘরের চাবি সংরক্ষিত থাকত। মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে ওই গোত্রের উসমান ইবনে তালহা রাদিআল্লাহু আনহুর কাছে চাবি হস্তান্তর করে তাকে সম্মানিত করেন। এরপর থেকে সেই ধারা এখনও অব্যাহত আছে।
উসমান ইবনে তালহা রাদিআল্লাহু আনহুর বংশধরেরা পর্যায়ক্রমে পবিত্র কাবাঘরের চাবি বহন করে আসছেন। তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়েই বিভিন্ন সময় সৌদি আরবের বাদশাহ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কাবাঘরে প্রবেশ করে থাকেন। তারাই কাবার দরজা খুলে দেন।
এ পর্যন্ত অসংখ্যবার পবিত্র কাবাঘরের তালা-চাবি পরিবর্তন করা হয়েছে। পবিত্র এই ঘরের চাবি একটি বিশেষ ব্যাগে রাখা হয়। পবিত্র কাবাঘরের গিলাফ যে কারখানায় তৈরি হয়, সেখানেই এই ব্যাগ বানানো হয়। আব্বাসীয়, আইয়ুবীয়, মামলুকীয় ও ওসমানিয়া যুগে কয়েকবার পবিত্র কাবাঘর মেরামত করা হয়েছে। তখন প্রয়োজন মতো নতুন তালা-চাবিও বানানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে পবিত্র কাবাঘরের চাবি পরিবর্তন করা হয়। সেই তালা-চাবিই এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রায় ১ হাজার ৬০০ বছর ধরে আরবের বানু শাইবা সম্প্রদায় পবিত্র কাবাঘরের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
এ এস/
Discussion about this post