পরমাণু বোমা হামলা থেকে বাঁচতে ভ্রাম্যমাণ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছে রাশিয়া। পরমাণু বোমা হামলার পর যে শকওয়েভ ও তেজস্ক্রিয়তা তৈরি হয়, তা থেকে সাময়িক সুরক্ষা দেবে এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো। এছাড়া প্রচলতি অন্যান্য অস্ত্রের হামলা থেকেও সুরক্ষা মিলবে এই আশ্রয়কেন্দ্রে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় তিন বছরের মাথায় চলতি সপ্তাহে প্রথমবারের মতো ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি দিয়েছে বিদায়ী জো বাইডেন প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে রাশিয়ার যে পরমাণু অস্ত্রনীতি তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নতুন নির্দেশনায় বলেছে, শক্তিধর কোনো দেশের সমর্থন নিয়ে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলে পাল্টা জবাবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে মস্কো। এর ফলে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা আরও প্রবল হয়েছে।
রাশিয়া শুধুমাত্র পরমাণু অস্ত্রনীতিই বদলায়নি, সেই সঙ্গে পরমাণু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে পরমাণু হামলা থেকে সুরক্ষা দেয় এমন ভ্রাম্যমান আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি শুরু করেছে দেশটি।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) প্রকাশিত রয়টার্সের এক প্রতিবেদন মতে, রাশিয়ার ইমার্জেন্সি মিনিস্ট্রির গবেষণা ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, যে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে সেগুলোর নাম ‘কেইউবি-এম’। এসব আশ্রয়কেন্দ্র পরমাণু বোমা হামলার পাশাপাশি অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সুরক্ষা দেবে।
এগুলো আরও যেসব পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে সেগুলো হলো-বিস্ফোরণ ও প্রচলিত অস্ত্রের আঘাত, ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য ও অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব।
যদিও এমন আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরুর সঙ্গে বর্তমান কোনো সংকটের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এর সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালানোর যে অনুমতি তার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাইডেন প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তকে ‘বেপরোয়া’ অভিহিত করে ক্রেমলিন এরই মধ্যে বলেছে, যদি সত্যি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানো হয়, তবে এর যথোপযুক্ত জবাব দেবে মস্কো।
বাইডেনের অনুমতির পর যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের হাজারতম দিনে এ হামলা চালানো হয়। এ হামলার পর ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, মঙ্গলবার বিকেলে রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক এলাকায় এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইউক্রেন। সেগুলোর সব কটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করা হয়। তবে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ওই এলাকায় একটি সামরিক স্থাপনায় আগুন ধরে যায়। এতে কেউ হতাহত হননি।
রুশ মন্ত্রণালয়ের এ বক্তব্যের আগে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানায়, তারা রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক এলাকায় একটি গোলাবারুদের গুদামে হামলা চালিয়েছে। এলাকাটি রুশ সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার ভেতরে। হামলার পর ১২টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, ‘কেইউবি-এম’ দেখতে জাহাজে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত কনটেইনারের মতো। এর দুটি মডিউল রয়েছে। এক একটি কক্ষে ৫৪ জন পর্যন্ত আশ্রয় নিতে পারবে। অন্যটি কারিগরি ব্লক হিসেবে ব্যবহারের জন্য। প্রয়োজনে এক একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আরও মডিউল যুক্ত করা যাবে।
রাশিয়ার ইমার্জেন্সি মিনিস্ট্রির গবেষণা ইনস্টিটিউটটি বলেছে, ভ্রাম্যমাণ এসব আশ্রয়কেন্দ্র নানাবিধ কাজের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো লোকজনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে। নাগরিকদের নিরাপত্তায় এটিকে একধাপ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেছে ইনস্টিটিউট।
ইনস্টিটিউট আরও বলেছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সহজেই ট্রাকে পরিবহনের উপযোগী এবং এতে পানি সরবরাহের সংযোগ দেওয়া সম্ভব। রাশিয়ার বিস্তীর্ণ বরফাচ্ছাদিত এলাকাতেও স্থাপন করা যাবে এসব আশ্রয়কেন্দ্র।
এম এইচ/
Discussion about this post