দেশজুড়ে চলছে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি। দেশের সর্বত্র বিরাজ করছে ঈদের আনন্দ। তবে এই আনন্দের মধ্যেও নিরানন্দের ঈদ কাটছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা। পরিবারের সদস্য হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে ভর্তি থাকায় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তার সঙ্গে থাকা মানুষের যেমন ঈদের আনন্দ নেই তেমনি আনন্দ নেই বাসার অন্য সদস্যদের। তাদের চোখেমুখে রাজ্যের হতাশা।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি এই অসুস্থ মানুষদের হাসিমুখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স, আয়া ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সবাই। এই সময়ে হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা কম থাকলেও রোগীদের চিকিৎসায় যাতে কোনো গাফিলতি নেই সে বিষয়ে তৎপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবাই।
সোমবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৯টার ঈদের জামায়াত শেষ করে এই প্রতিবেদক সরেজমিন ঘুরে দেখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের ৪র্থ তলার একটি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় ৪ সদস্যের একদল চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাসিমুখে ঈদের কুশল বিনিময় করতে। সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, মানুষের সুস্থতা অসুস্থতা ঈদ কিংবা উৎসব বুঝে না। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসায় যাতে কোনো ঘাটতি না হয় সে জন্য তাদের ৫০ ভাগ ঈদের ডিউটি করছেন এবং বাকিরা ছুটিতে আসেন।
বিএসএমএমইউয়ের উপ উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য রোগীর সেবা করা। এ বিষয়ে হাসপাতালের প্রতিটি অংশীজন তৎপর। আমরা সেবা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স রেখেছি। ঈদের জামায়াত শেষে উপাচার্য স্যারের নেতৃত্বে আমরা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছি, হাসপাতালে কর্তব্যরত সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছি। আমরা কর্মরতদের জন্য উন্নত খাবারের ব্যবস্থা করেছি আবার যে রোগীরা ভর্তি আছেন তাদের জন্যও খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও জরুরি বিভাগ চালু রয়েছে।
ঈদের দায়িত্বপালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি মনে করি দেশের প্রতিটি চিকিৎসক রোগী বান্ধব। আমাদের পরিবারের থেকে আমরা রোগীদের কম গুরুত্ব দেই না। প্রতিবছর আমরা এভাবেই ঈদ কিংবা অন্য যেকোনো বড় উৎসব ও সরকারি ছুটির দিনে সেবা দিয়ে যাই। এরপরও মাঝেমধ্যে চিকিৎসক নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন হয়, যা দুঃখজনক।
ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের ভিড়। কোরবানি দিতে গিয়ে গরুর লাথি, চাপাতির কোপ, মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন তারা। চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের কাউকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন, কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যান্ডেজ ও স্যালাই দেওয়া হচ্ছে। আর যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের ভর্তি দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেলের সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফ হোসেন বলেন, কালে বাসায় কোরবানির কাজ বুঝিয়ে দিয়ে হাসপাতালে চলে এসেছি। আমরা আসলে নিজেদের এভাবেই প্রস্তুত রাখি। চিকিৎসা পেশায় যারা নিয়োজিত তারা নিজেদের নিয়ে কখনো চিন্তা করতে পারেন না।
দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, কর্মজীবনে বহুবার কর্মস্থলে ঈদ করেছি। এবারও অন কল ডিউটিতে আছি অর্থাৎ ফোনে সহকর্মীদের পরামর্শ দিচ্ছি, বাসায় বসে তদারকি করছি। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে ছুটে যেতে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছি। শুধু চিকিৎসক নয় গণমাধ্যম কর্মী, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস আমরা সবাই পরিবারের সঙ্গে ঈদ না কাটিয়ে মানুষের সেবায় কর্মস্থলে ঈদ কাটাই।
এ এস/
Discussion about this post