আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে যেসব উদ্দেশ্য নিয়ে প্রেরণ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো পরোপকার ও অন্যের কল্যাণ কামনা। মানুষের বিভিন্ন গুণের মধ্যে পরোপকারিতা হলো একটি মহৎ গুণ। এটি মানুষ মানবিকতার দাবি ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং মন্দ কাজে বাধা দেবে।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত: ১১০)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে পরোপকারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। এখানে পরোপকারের ফজিলত সম্পর্কিত ৪টি হাদিস তুলে ধরা হলো—
আল্লাহর দয়া
পরোপকার সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৪৭)।
যে মানুষের বেশি উপকার করে, সে-ই শ্রেষ্ঠ
অপর হাদিসে মহানবী সা. বলেছেন, সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। তাই পরোপকারের চেতনায় কোনো শ্রেণিভেদ নেই। বড়-ছোট, ধনী-গরিব, আত্মীয়-অনাত্মীয়, স্বজাতি-বিজাতি, মুসলিম-অমুসলিম এসব ব্যবধানের ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামের শান্তি ও সৌহার্দ্যের সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘মুমিন মিলেমিশে থাকে। তার মধ্যে ভালো কিছু নেই, যে মিলেমিশে থাকতে পারে না। যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সে-ই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ (আল-মুজামুল আওসাত: ৫৭৮৭)।
কারো অভাব দূর করলে আল্লাহ স্বাচ্ছন্দ্য দান করেন
আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার আখিরাতের সংকটগুলোর একটি মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালাও তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৯)।
সাহাবিদের দানের প্রতিযোগিতা
পরোপকারের জন্য সাহাবিরা একে-অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতেন। এক হাদিসে জায়দ ইবনে আসলাম রহ. তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন—
উমর রা.-কে আমি বলতে শুনেছি, রাসূল সা. (তাবুকের যুদ্ধের সময়) আমাদেরকে দান-সদকা করার নির্দেশ দেন। সৌভাগ্যক্রমে ওই সময় আমার সম্পদও ছিল। আমি (মনে মনে) বললাম, যদি আমি কোন দিন আবু বকর রা.-কে অতিক্রম করে যেতে পারি, তাহলে আজই সেই সুযোগ।
উমর রা. বলেন, আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নিয়ে আসলাম। রাসুল সা. বললেন, তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য তুমি কি রেখে এসেছ? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ। আর আবু বকর রা. তাঁর পুরো সম্পদ নিয়ে এলেন। তিনি বললেন, হে আবু বকর! তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য তুমি কি রেখে এসেছ?
তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলকেই রেখে এসেছি। আমি (মনে মনে) বললাম, আমি কখনও আবু বাকর (রা.)-কে অতিক্রম করতে পারব না। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৭৫)।
এস আই/
Discussion about this post