কক্সবাজার টেকনাফের সদর ইউনিয়নের মহেশখালিয়াপাড়া এলাকায় মানবপাচারকারীদের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৫৮ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। টেকনাফের পাহাড়ি এলাকার আস্তানা থেকে উদ্ধার করা এসব রোহিঙ্গার মধ্যে ৯ পুরুষ, ১৬ নারী ও ৩৩ শিশুসহ ৫৭ রোহিঙ্গা ও ১ বাংলাদেশি রয়েছে।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. ওসমান গনি। অভিযানে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মানব পাচার চক্রের ইয়াছিন বাহিনীর প্রধান মো. ইয়াছিনসহ (২৩) চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি জানান, টেকনাফ মডেল থানার বিশেষ একটি পুলিশ দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। এসময় মানব পাচারকারী চক্রের ইয়াছিন বাহিনীর প্রধান টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মহেশখালিয়া পাড়ার আমজল হোসেনের ছেলে মোঃ ইয়াছিন (২৩), একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড দরগারছড়ার জলু সওদাগরের ছেলে মোঃ জুবায়ের (৩৫), একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড উত্তর লম্বরী এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে নাজির হোছন (৬১) এবং নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড লক্ষীনারায়নপুর রশিদ মিয়ার বাড়ীর পাশের তাজুল ইসলামের ছেলে রামিমুল ইসলাম রাদীদ (৩১) কে আটক করে পুলিশ। আটক মানবপাচারকারী চক্রের ৪ জন ও উদ্ধার ৫৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

ওসি আরও বলেন, ‘মানবপাচার দালালরা এসব ভিকটিমদের আর্থ-সামাজিক অনগ্রসরতা ও পরিবেশগত অসহায়ত্বকে পুঁজি করে উন্নত জীবন-যাপন ও অধিক বেতনে চাকুরী ও অবিবাহিত নারীদেরকে বিবাহের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয়ে নিয়ে যৌন নিপীড়ন, প্রতারণামূলক বিবাহ ও জবরদস্তিমূলক শ্রমসেবায় লিপ্ত করায়। এমন উদ্দেশ্য দালাল চক্র তাদের আস্তানায় চার-পাঁচদিন আটক রাখে। পরবর্তীতে পাচারকারীরা বিভিন্ন সিন্ডিকেটের যোগসাজশে মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনিশিয়া ভিকটিমদের কাছে পাচার করে।’
উদ্ধারকৃত উখিয়ার থাইংখালি ক্যাম্প-১৩ এর সৈয়দ বলেন, ‘মানব পাচারকারী দালালদের প্রলোভনে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ক্যাম্প থেকে বের করা হয়। পরে সদর ইউনিয়নের হাতিয়ারঘোনা এলাকায় দালালদের বসত ঘরে রাখে। পাহাড়ি এলাকার লাগোয়া বসত ঘরে এক সপ্তাহ ধরে আমাদের আটক রাখা হয়। দালাল চক্র আমাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে।’
এ সময় ওসি বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া এসব মানবপাচারকারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। উদ্ধার ভিকটিমদের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হবে।’
অভিযান পরিচলানাকালে পুলিশ টিম টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাতিয়ারঘোনা এলাকার বিজিবি সাইনবোর্ড সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ সড়কের পূর্বপাশে পৌঁছালে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে ওই চার দালালকে আটক করতে সক্ষম হলেও আরও অনেকে পালিয়ে যায়। বর্তমানে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
Discussion about this post