জনসংখ্যা কমাতে গিয়ে চীনে এখন নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বহু বেড়ে গেছে। বিয়ের জন্য নারী পাচ্ছে না চীনের কোটি কোটি তরুণ। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে মাঠে সক্রিয় পাচারকারী চক্র। বাংলাদেশের পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে চীনাদের চেহারার মিল আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চক্রের সদস্যরা উন্নত জীবনযাপনের লোভ দেখিয়ে পাহাড়ি পরিবারগুলোকে রাজি করাচ্ছে। এরপর তরুণী-কিশোরীদের পাচার করা হচ্ছে চীনে। এ কাজে সুবিধার জন্য অনেক সময় এ দেশেই চীনাদের সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বা বিয়ের জাল কাগজ তৈরি করা হচ্ছে।
এভাবে চক্রের সদস্যরা গত সাত বছরে ৮ হাজারের বেশি কিশোরী-তরুণীকে চীনে পাচার করেছে। তাদের কাউকে কাউকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেককে বাসায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। জীবন বাঁচাতে কেউ কেউ পালিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, চীনে নারী পাচারের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে কখনো কোনো অভিযোগ আসে না। তবে বিষয়গুলো তাঁরা জানেন।
জানা গেছে, পাচারকারী চক্রে নাম এসেছে লিমা চাকমা নামের এক নারীর। তিনি চট্টগ্রামের ব্যারিস্টার কলেজ এলাকায় এক ফ্ল্যাটে থাকতেন। এক বছর আগে এক চীনা নাগরিককে বিয়ে করে তিনি চীনে চলে যান। লিমার ছোট ভাই লিমন চাকমা ও বোন শোভারানী চাকমাও চক্রের সদস্য।
লিমা চাকমাদের মতো অন্তত আরও ২৫-৩০টি চক্র পাহাড়ে কাজ করছে। পাচারের পর উদ্ধার একাধিক নারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাচারের শিকার হচ্ছেন অধিকাংশ নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েই। পরিবারের অভাব, মা-বাবার অসচেতনতা, বিয়ের প্রলোভন, চাকরি ও চীনে নাগরিকত্বের লোভে পড়ে মেয়েরা চীনাদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জানায়, একজন নারীকে পাচারের জন্য সর্বনিম্ন ৮ লাখ টাকা লেনদেন করে চক্রটি। তবে এ টাকা কমবেশি হয় বয়স আর চেহারার ওপরে। কম বয়সী মেয়েদের জন্য ১৫-২০ লাখ টাকা পর্যন্তও লেনদেন হয়। এই টাকার অধিকাংশ চলে যায় চক্রের হাতে। কিছু টাকা ব্যয় হয় পাসপোর্ট, ভিসা ও ঢাকায় থাকায়-খাওয়ার জন্য। ভুক্তভোগী পরিবারও এখান থেকে এক-দেড় লাখ টাকা পায়।
ভুক্তভোগী এক নারী জানান, চীনে নিয়ে তাঁদের একপ্রকার নিলামে ওঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে থেকে কাউকে সত্যি বউ করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আবার কাউকে বাসাবাড়ি বা যৌনপল্লিতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এসব তথ্য তুলে ধরে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছে দৈনিক আজকের পত্রিকা।
সূত্র – আজকের পত্রিকা
এ এস/
Discussion about this post