পুঁজিবাজার থেকে দেউলিয়াত্বের কারণে তালিকাচ্যুত হয়ে ৫৬টি কোম্পানির জায়গা হয়েছে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি)। এসব কোম্পানিতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। তবে এসব শেয়ারধারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের আর্থিক মূল্যমান কমতে কমতে নেমে এসেছে ৪০০ কোটি টাকার নিচে।
ওটিসির ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে ১টি কোম্পানির বিস্তারিত তথ্য নেই।
বাকি ৫৫টি কোম্পানির সর্বশেষ লেনদেন হওয়া শেয়ারদর ধরে হিসাব করলেও ৩৯৬ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আটকে রয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের এই টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে। যদিও বিনিয়োগকারীদের মূল বিনিয়োগের পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বেশি। কারণ, এসব কোম্পানির অনেকের শেয়ার সর্বশেষ ২ টাকারও কমে লেনদেন হয়েছে। এমন অবস্থায় কোম্পানিগুলোর অবসায়নের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘ওটিসির ভবিষ্যৎ দেখি না। উদ্যোক্তারা আগেই শেয়ার বিক্রি করে ফেলেছেন। শেয়ার বিক্রি করে ফেলার পর এসব কোম্পানি জাহান্নামে চলে গেলেই তাঁদের কী আসে যায়? ভোগান্তি সাধারণ বিনিয়োগকারীর। আমি রেগুলেটর বডি হলে উদ্যোক্তাদের শেয়ার বেচতেই দিতাম না।’
এগুলো থেকে বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখেন না অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার সুযোগই নেই। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ইতিবাচক হলে অবসায়নের মাধ্যমে কিছু ফিরে পাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এগুলোর দেনা এত বেশি যে অবসায়ন করলেও কিছুই পাবেন না বিনিয়োগকারীরা।’
এরপরও কোম্পানিগুলোর অবসায়নের পরামর্শ দিয়ে আবু আহমেদ বলেন, এগুলো অবসায়নে যাওয়াই ভালো। এর জন্য পরীক্ষা করতে হবে। দেনা বাদ দিয়ে যদি সম্পদ থাকে, সে ক্ষেত্রে কিছু ফেরত পেতে পারেন বিনিয়োগকারীরা।
সাধারণত দেউলিয়া হয়ে যাওয়া, উৎপাদন বন্ধ, অস্তিত্ববিহীন কোম্পানির শেয়ারগুলোই ওটিসি মার্কেটে লেনদেন হয়। এটা পুঁজিবাজারেরই অংশ। যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে যোগ্যতা ধরে রাখতে পারে না, সেসব কোম্পানি তালিকাচ্যুত হয়ে চলে আসে ওটিসি মার্কেটে। ওটিসিকে অনেকটা পুঁজিবাজারের ডাস্টবিনও বলা চলে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যমতে, ওটিসি মার্কেটে লেনদেন হওয়া ৫৫টি কোম্পানির সর্বশেষ দর অনুযায়ী উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে বিনিয়োগকারীদের টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ১৫৩ কোটি ৪০ লাখ ৫২ হাজার টাকার বিনিয়োগ রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে। তবে এই কোম্পানিতে বিনিয়োগের পরিমাণ অন্তত ১০ গুণ বেশি। এভাবে প্রতিটি কোম্পানিরই বিনিয়োগের পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বেশি।
এফএস/
Discussion about this post