যুক্তরাষ্ট্রে ৬ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি-মার্কিন শিশু ওয়াদী আলফায়ুমি হত্যার দায়ে জোসেফ চুবা নামের এক ব্যক্তিকে ৫৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বিদ্বেষপ্রসূত ঘৃণাজনিত অপরাধ ও হত্যার দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। শুক্রবার (২ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের উইল কাউন্টির বিচারক অ্যামি বার্তানি-টমচাক শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করেন। ৭৩ বছর বয়সি বাড়ির মালিক জোসেফ চুবা ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই ইলিনয়ের প্লেইনভিল এলাকায় নিজের ভাড়াটিয়া হানান শাহিন ও তার পুত্র ওয়াদী আলফায়ুমির উপর হামলা চালান।
পুলিশ জানায়, গাজায় যুদ্ধ নিয়ে ক্ষুব্ধ চুবা শাহিনের বাসার দরজায় গিয়ে জোরপূর্বক ভেতরে ঢুকে পড়েন। তিনি শাহিনকে গলা চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দেন এবং সামরিক ধাঁচের ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। শাহিন একাধিক ছুরিকাঘাত সহ্য করেও বাথরুমে পালিয়ে গিয়ে জরুরি নম্বরে ফোন করে সহায়তা চান।
কিন্তু শিশু ওয়াদী বাঁচতে পারেনি। তাকে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করা হয়, যার ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে।
আদালতের কার্যক্রমে হানান শাহিন তার সাক্ষ্যে বলেন, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই চুবা ক্রমাগত মুসলিমদের নিয়ে সন্দেহ ও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করছিলেন। হামলার সময় চুবা তাকে বলেছিলেন, ‘তুমি মুসলমান, তোমার মরতে হবে।’
এই ঘটনা গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত সবচেয়ে আলোচিত ইসলামবিদ্বেষ ও আরববিদ্বেষমূলক হামলাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর অভিযুক্ত চুবাকে বাড়ির বাইরে রক্তমাখা অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়। পরে তাকে গ্রেফতার করে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
চুবা নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যে জুরি বোর্ড তাকে দোষী সাব্যস্ত করে।
বিচারক রায় ঘোষণার সময় বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড ছিল নিষ্ঠুর ও পাশবিক।’
তিনি জানান, শিশুকে হত্যার জন্য ৩০ বছর, তার মায়ের ওপর হামলার জন্য ২০ বছর এবং ঘৃণাজনিত অপরাধের জন্য ৩ বছর মিলিয়ে মোট ৫৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শিশু ওয়াদীর দাদা মাহমুদ ইউসুফ আদালতে বলেন, ‘ওয়াদী চুবাকে দাদার মতো ভালোবাসতো। সেই ভালোবাসার বদলে সে পেয়েছে ঘৃণায় ভরা নিষ্ঠুর মৃত্যু। মিথ্যা প্রচারণার ভিত্তিতে যারা যুদ্ধ আমদানি করছে, তারা বুঝতে পারছে না নিরপরাধদের জীবনের কী ক্ষতি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ এই দেশে টেনে আনা যাবে না। ঘৃণার রাজনীতি এই দেশে চলতে দেওয়া যাবে না।’
ঘটনার পর আমেরিকান-আরব বৈষম্যবিরোধী কমিটি (এডিসি) এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এই রায় কিছুটা হলেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে আমাদের সবাইকে একত্র হয়ে নিশ্চিত করতে হবে যেন আর কখনো ইসলামবিদ্বেষ, আরববিদ্বেষ বা ফিলিস্তিনিদের প্রতি ঘৃণার ঘটনাগুলো এই সমাজে স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য না হয়।’
চলতি বছরের মার্চ মাসে আমেরিকান ইসলামিক সম্পর্ক কাউন্সিল (কেয়ার) জানিয়েছে, গত এক বছরে তারা ৮ হাজার ৬৫৮টি ইসলামবিদ্বেষ ও আরববিদ্বেষমূলক ঘটনার অভিযোগ পেয়েছে, যা তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এম এইচ/
Discussion about this post