পরিবারের কাছে ফিরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও পীড়নসহ নানা বিষয়ে ক্ষোভ ঝেড়ে বিকেল সাড়ে ৫টায় ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্ট দিয়েছেন সারজিস।
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেফতার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না৷ আপনারা কথা রাখেননি৷’
‘আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন৷ সারা দেশে আমার স্কুল-কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিচার্জ করেছেন৷ যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন৷ আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন! মাশরুর তার উদাহরণ৷’
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে এ সমন্বয়ক লেখেন, ‘যারা একটিবারের জন্যও এই আন্দোলনে এসেছে তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, গ্রেফতারের ভয়ে থাকে৷ এমন অনেকে আছে যাদের পরিবার এখনও তাদের খুঁজ পায়নি৷ এমন তো হওয়া উচিত ছিল না!’
সহিংসতার সঙ্গে যাদের দূরতম সম্পর্কও নেই, তাদেরও হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে সারজিস লেখেন, ‘কোথায় মহাখালীর সেতু ভবন আর কোথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়! অথচ আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মহাখালীর সেতু ভবনে হামলার জন্য গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেন৷ সাথে আছে আসিফ মাহতাব স্যার, মাশরুরসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য শিক্ষার্থী৷’
নির্বিচার গ্রেফতার-নির্যাতন করে আন্দোলন দমানো যাবে কি না, প্রশ্ন রেখে তিনি লেখেন, ‘রিকশা থেকে নামিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন৷ আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন৷ কী ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?’
সরকারকে তরুণ প্রজন্মের অদম্য শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সারজিস লেখেন, ‘৬ দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ৬ জনকে আটকে রাখা যায়, কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত, সেগুলো কীভাবে নিবৃত করবেন?’
পুলিশ বাহিনীকে কটাক্ষ করে তিনি লেখেন, ‘পুলিশ ভাইদের উদ্দেশে একটা (কথা) বলি৷ এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের ওপর নয়, পুলিশের ওপর নয়৷ এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার ওপর৷ যে পোশাকটাকে ইউজ করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গণে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার ওপর৷ ওই পোশাকটা ছেড়ে আসুন আমাদের সাথে, বুকে টেনে নেব৷’
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ সমন্বয়ক বলেন, ‘পরিশেষে এটুকু বলতে চাই, এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যে কোনো কিছু মোকাবিলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই৷ যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে, ততদিন এ লড়াই চলবে৷’
উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজত থেকে (বৃহস্পতিবার) ছাড়া পেয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। দুপুর দেড়টার দিকে সমন্বয়কের স্বজনদের উপস্থিতিতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। পরে গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা নিজেদের গাড়িতে করে তাদের বাসায় পৌছে দেন।
ডিবি কার্যালয় ছাড়া পাওয়া ছয় সমন্বয়ক হলেন: নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের, নুসরাত তাবাসসুম, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।
Discussion about this post