চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ৪ নম্বর শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন সোহান (১৯) এবং ৩০ নম্বর শয্যায় আছেন তার বড় বোন শাহীনা (২৩)। তাদের মুখে অক্সিজেন মাস্ক। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। আগুনের তাপ আর ধোঁয়ায় পুড়েছে দুজনের শ্বাসনালি।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরের বলুয়ার দিঘির পাড়ে তাদের বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় আগুন থেকে বাঁচতে সোহান, শাহীনা ও তার মা-বাবাসহ আশ্রয় নিয়েছিলেন ঘরের শৌচাগারে। পরে সেখান থেকে দগ্ধ অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে নেয়া হয় হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। কিন্তু সোহান ও শাহীনা এখনো জানে না তাদের মা-বাবা না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে রয়েছে সোহানদের বাবা মো. ইলিয়াছ (৫০) ও মা পারভিন আকতারের (৪৫) মরদেহ।
নিহতের স্বজনেরা জানান, আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বলুয়ার দিঘির পশ্চিম পাড়ের জাফর সওদাগরের কলোনিতে এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। নিহত ইলিয়াছ ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন। ছেলে সোহানও একই কাজ করেন। ইলিয়াছের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছোট মেয়ে তাহসিন বাসায় ছিলেন না। তিনি কয়েক দিন আগে কর্ণফুলী থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মা-বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাহসিন হাসপাতালে চলে আসেন। পরিবারের এমন বিপর্যয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ছোট মেয়ে তাহসিন জানান, পাঁচ মাস আগে বলুয়ার দিঘির দক্ষিণ পাড় থেকে পশ্চিম পাড়ের এই সেমিপাকা বাসায় আসেন তারা। ভাড়া ৬ হাজার ৩০০ টাকা। মায়ের সঙ্গে দুই দিন আগে ফোনে তার শেষ কথা হয়। আজ সকালে তিনি আগুন লাগার খবর পান। চিকিৎসাধীন ভাই-বোন এখনো মা-বাবার মৃত্যুর সংবাদ জানেন না বলে জানান তাহসিন।
সোহানের পাশের শয্যায় চিকিৎসাধীন মো. ফয়সাল বালতি তৈরির কারখানায় চাকরি করেন। তিনি সোহানের বন্ধু। পাশের বাসায় থাকেন। হাসপাতালে ফয়সালকে শুশ্রূষা দিয়ে যাচ্ছেন তার মা রুশনা বেগম। রুশনা বলেন, আগুন দেখে ফয়সাল চিৎকার করে তাদের বের হয়ে আসতে বলছিল। পরে উদ্ধারের জন্য সে বাসায় ঢুকে পড়ে। তখন আগুন আরও ছড়িয়ে যায়। তারা সবাই তখন শৌচাগারে আশ্রয় নেয়। এখন ছেলের অবস্থা খুব খারাপ। শ্বাস নিতে পারছে না।
এ বিষয়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. এস খালেদ বলেন, ‘আহত তিনজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। গরম ধোঁয়ায় শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) সেবা দরকার। আইসিইউতে পাঠানোর চেষ্টা করছি।’
সূত্রঃ চ্যানেল ২৪
এ ইউ/
Discussion about this post