জাপান ও কোরিয়া পাঠানোর কথা বলে অর্ধশত যুবক-যুবতীর কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ২৫ জন বগুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর হঠাৎ ‘একুশে আইটি কোরিয়ান ও জাপান ভাষা সেন্টার’ নামে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়ে এখন লাপাত্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া শহরের সেউজগাড়িতে মুন ম্যানশন নামে একটি বাড়ির ২য় তলা ভাড়া নিয়ে দুই সহোদর এই প্রতারণা করেন। অভিযোগে আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ আড়াই কোটি উল্লেখ করা হলেও টাকার পরিমাণ তিন কোটির বেশি হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। কারণ তারা লাপাত্তা হবার পর অসংখ্য লোকজন টাকার জন্য যোগাযোগ করছেন।
অভিযুক্ত কোম্পানির মালিক পটুয়াখালী জেলার জাহাঙ্গীর প্যাদার ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও তার ছোট ভাই আবু জাফর (৩০)। তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে সেউজগাড়ি মোড়ে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
থানায় অভিযোগকারী আশা বানু বলেন, একুশে আইটি কোরিয়ান ও জাপান ভাষা সেন্টারের ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দেখে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলাম। কয়েক দফায় দুই ভাইকে জাপানে যাওয়ার জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। আমার ব্যাচের ২৫ জনের কাছ থেকেই তারা আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তারা। তাদের প্রতারণা বুঝতে পেরে টাকা ফেরত চাইতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরে থানায় অভিযোগ করলে তারা রাতারাতি পালিয়ে যায়।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে আছিয়া বেগম বলেন, শহরের বৃন্দাবনপাড়া ও উপশহরের বিভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে আমি জীবিকানির্বাহ করি। ছেলে আরিফুলকে কোরিয়া পাঠানোর জন্য ২০২১ সালের জুন মাসে জহিরুল ও জাফরকে দুই দফায় ২ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। তারা পাসপোর্ট, ভাষার ক্লাস ও ভিসার কথা বলে টাকাগুলো নেন। টাকা নিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা দূরে থাক, ভাষার ক্লাসও করায়নি। টাকা চাইলে আজ ১০ হাজার কাল ৫ হাজার দেব বলে ১ টাকাও দেয়নি। এখন শুনি তারা লাপাত্তা। এখন পথে বসা ছাড়া আমার আর উপায় নেই।
সরকারি শাহ সুলতান কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, তিন মাস আগে অনলাইনে তাদের পেজের চটকদার ভিডিও দেখে জাপানে যাওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন তাদের খোঁজ নেই। বাড়িতে যাওয়ার সাহস হয় না। তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে আমাদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক।
সেউজগাড়ি এলাকার মুন ম্যানশনের মালিক শামিম হাসান বলেন, জহিরুল ও জাফর দুই ভাই প্রতারক। আমারও বাড়ি ভাড়ার ৩০ হাজার টাকা না দিয়েই তারা পালিয়েছে। এখন প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসে তাদের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার দাবি করে। আশপাশের দোকানিদের থেকে তারা মোটা অংকের টাকা বাকি রেখে গেছে।
মুঠোফোনে এই বিষয়ে জানতে চাইলে জহিরুল বলেন, ‘একুশে আইটি কোরিয়ান ও জাপান ভাষা সেন্টার ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। বগুড়ায় আমার ভাই জাফর শাখা খুলে প্রতারণা করেছে। তার দায় আমি নেব না। কেউ বলতে পারবে না কোনো টাকা আমি নিয়েছি।’
অভিযুক্ত জাফর বলেন, ‘এখন ব্যক্তিগত সমস্যায় বাইরে আছি। যদি কারো টাকা নিয়ে থাকি দিয়ে দেব।’
বগুড়া সদর থানা পুলিশের ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, একুশে আইটি নামের প্রতিষ্ঠাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার আগেই দুই সহোদর লাপাত্তা হয়েছেন। এখন অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। তাদের আটক ও পরবর্তী সময়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কাজ করছে।
Discussion about this post