ঝালকাঠির নলছিটি পৌর এলাকার সারদল গ্রামের শতবর্ষী হাকিম মৃধা। স্বাভাবিকভাবেই একটু ঝুঁকে হাঁটাচলা করতে হয়। তাতে অবশ্য চলাফেরায় খুব একটা অসুবিধা হয় না। এই বয়সেও একা একা হেঁটে মসজিদে আসেন, আজান দেন এরপর জামাতে নামাজ আদায় করেন।
হাকিম মৃধা দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সারদল তালুকদার বাড়ির সামনে আল আকসা জামে মসজিদে বিনা বেতনে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়লেও একাই হাঁটাচলা করেন তিনি। এখনও রোজা রাখেন। চশমা ছাড়াই তার দৃষ্টি এখনও স্পষ্ট। তিনি বর্তমানে ওই এলাকার সব চেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি। সবার কাছে তিনি বড়মিয়া মুয়াজ্জিন নামে পরিচিত।
হাকিম মৃধার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলের নাম ইউনুস মৃধা। তিনি পেশায় একজন জেলে। মেঝ ছেলে ইউসুফ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন। কয়েকবছর আগে মারা গেছেন। ছোট ছেলে খলিল পেশায় একজন দিনমজুর। বড় মেয়ের নাম রেনু বেগম ও ছোট মেয়ে রানু বেগম। তারা স্বামীর বাড়িতে থাকেন। হাকিম মৃধার সব নাতি-নাতনি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। এক সময় কৃষিকাজ করলেও এখন বেশিরভাগ সময় তার মসজিদেই কাটে। তিনি অর্থনৈতিক স্বচ্ছল না হলেও কারো কাছে হাত পাতেন না।
হাকিম মৃধার প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন অনেক আগেই। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে নেই কোনো সন্তান। এক সময় কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি তার সংসারেও সংকট এনেছে। তাই বলে কারো কাছে হাত পাততে চান না হাকিম মৃধা।
ইমাম হওয়ার সুযোগ না থাকায় ছেলের ঘরের নাতি বাপ্পিকে বানিয়েছেন হাফেজ। তাঁর ইচ্ছা বাপ্পি বড় হয়ে ইমাম হবেন। স্থানীয় ইসমাইল জানান, হাকিম মৃধাকে তিনি ছোটবেলা থেকেই মসজিদে আজান দিতে দেখেছেন। তার মধ্যে কোনো ধরনের লোভ লালসা নেই। তিনি ভালো মনের মানুষ বলেও জানান ইসমাইল।
মসজিদের ইমাম মো. মাহাদী হাসান বলেন, আমি ৫ বছর এই মসজিদে ইমাম হিসেবে রয়েছি। এ পর্যন্ত মুয়াজ্জিন হাকিম মৃধার খারাপ কোনো অভ্যাস দেখিনি। বরং বন্যা বৃষ্টি ও গভীর শীতের মধ্যে ৫ ওয়াক্ত নামাজের আজান এবং জামাতে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করেন তিনি। বড় ধরনের সমস্যা না হলে মসজিদে তিনি সবসময় আসেন।
হাকিম মৃধা বলেন, শরীর যত দিন সুস্থ আছে, যত দিন বেঁচে আছি, তত দিন মসজিদের খেদমত করে যাবো।
টিবি
Discussion about this post