অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ কোম্পানি লিমিটেড (এএনএ) নামে একটি বিদেশি বিমানসংস্থার জাঁকজমকপূর্ণ অফিস খুলে মাত্র এক মাসেই প্রায় অর্ধশত চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শতাধিক বেকার তরুণ-তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করা এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
তারা হলেন-চক্রের মূলহোতা ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতা এমএ হক আলম ফরহাদী (৬০), মেহেরাব হোসেন (২১), রাসেল হোসাইন (৩০) ও শাহাদাত হোসেন (৩৫)। অভিযানের সময় চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া নগদ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা, প্রতারণায় ব্যবহৃত ল্যাপটপ, মনিটর, বিপুলসংখ্যক চাকরির আবেদনপত্রসহ মালামাল উদ্ধার করা হয়।
চাকরির নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ পাতে চক্রটি। প্রথমে রাজধানীর ভাটারায় সুসিং টাওয়ার ভবনে ‘অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ কোম্পানি লিমিটেড (এএনএ)’ নামে একটি বিদেশি বিমান সংস্থার জাঁকজমকপূর্ণ অফিস খোলা হয়। পরে সেই ঠিকানা ব্যবহার করে এয়ার হোস্টেজসহ বিভিন্ন পদে চাকরির চটকদার বিজ্ঞাপন দেয় প্রতারক চক্র। চাকরিপ্রত্যাশীরা আবেদনের পর তাদের কাছে সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে নেওয়া হয় টাকা। এভাবে এক মাসে অর্ধশত চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। আর এই চক্রের মূলহোতা এক হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতা।
র্যাব বলছে, বিদেশি বিমান সংস্থার নামে অফিস খুলে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ পাতে এই প্রতারক চক্র। বিজ্ঞাপন দেখে দুই শতাধিক চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে থেকে বাছাই করে ১৭০ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। সাক্ষাৎকারে বসার ক্ষেত্রে অগ্রিম দিতে হয় ১ থেকে ২ লাখ টাকা। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে আরও ৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, তাদের টার্গেট ছিল আগামী ছয় মাসে ইন্টারভিউ ও প্রশিক্ষণের নামে অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। তারা ভাটারায় ড্রাগমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে টাকা আদায়ের চুক্তিও করে।
তিনি বলেন, চক্রের মূলহোতা আলম অল্প পড়াশোনা করে ফেনীতে নিজ এলাকায় হোমিও ওষুধ বিক্রি করতেন। পরে ঢাকায় এসে বিভিন্ন প্রতারণায় জড়ান। তিনি নিজেকে বিসিএস শিক্ষা কর্মকর্তা এবং দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। এমনকি তার তিন সন্তান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমনটিও বলে বেড়াতেন। সম্প্রতি তিনি বিমান সংস্থায় চাকরির এ ফাঁদ পাতেন। র্যাবের কাছেও আলম ১৮-১৯ বছর ধরে দুদকের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন বলে পরিচয় দেন। যদিও এর কোনো সত্যতা মেলেনি। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের দুটি মামলা আছে।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার মেহেরাব একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চাকরি খুঁজতে গিয়ে আলমের সঙ্গে তার পরিচয়। পরে তিনিও তার সঙ্গে যোগ দেন। প্রতিষ্ঠানটিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন মেহেরাব। আর শাহাদাত পড়ালেখা শেষ করে বেকার ছিলেন। কয়েক মাস একটি এয়ার টিকিটিং কোম্পানিতে চাকরি করেছেন, পরে সহকর্মীর মাধ্যমে আলমের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। পরে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে রিজারভেশন অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। রাসেলের চাকরি খুঁজতে গিয়ে চক্রের হোতার সঙ্গে পরিচয়। আলমের প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ শুরু করে তিনি প্রতারণায় জড়ান।
এস আর/
Discussion about this post