বৃষ্টি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীবাসীর জন্য নিয়ামত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তার এই মহা নিয়ামতের ব্যাপারে বলেন, ‘আর তিনিই সে সত্তা, যিনি তাঁর (রহমত) বৃষ্টির আগে বায়ু প্রবাহিত করেন সুসংবাদ হিসেবে, অবশেষে যখন সেটা ভারী মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি সেটাকে মৃত জনপদের দিকে চালিয়ে দিই, অতঃপর আমি তা দ্বারা বৃষ্টি বর্ষণ করি, তারপর তা দিয়ে সব রকমের ফল উৎপাদন করি। এভাবেই আমরা মৃতদের বের করব, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৭)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি কি দেখেন না, আল্লাহ আকাশ থেকে ভারী বর্ষণ করেন, অতঃপর তা ভূমিতে নির্ঝররূপে প্রবাহিত করেন। তারপর তা দ্বারা বিভিন্ন বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়।
তবে বৃষ্টির অন্যতম ফজিলত হলো, এ সময় দোয়া কবুল হয়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়ে থাকে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪০)। তাই মুমিনের কর্তব্য বৃষ্টির সময় মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। যদি অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়, যা ফসল ইত্যাদি নষ্ট করতে পারে, জনজীবনে দুর্ভোগ নামাতে পারে, তাহলে আল্লাহর কাছে সেই বৃষ্টি থেকে আশ্রয় চাওয়া।
বৃষ্টির সময়ে দোয়া করা সুন্নত। হযরত সাহল বিন সাদ (রা.) বলেন, দুই সময়ের দোয়া খুব কমই ফেরত দেওয়া হয়- আজানের সময়ের দোয়া এবং রণাঙ্গনে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময়ের দোয়া। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া। (আবু দাউদ ২৫৪০)
বৃষ্টির সময় হযরত মুহাম্মদ (সা.) দোয়া কবুলের সুসংবাদ দিয়েছেন। এ সময়ে রাসুল (সা.) নিচের দোয়াটি করতেন-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিয়া। অর্থ: হে আল্লাহ! মুষলধারায় কল্যাণকর বৃষ্টি দাও। সহিহ বোখারি : ১০৩২
বৃষ্টি দেখলে নবী কারিম (সা.) এ দোয়াটিও পড়তেন। উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সায়্যিবান হানিয়া। অর্থ: হে আল্লাহ! বরকতপূর্ণ ও সুমিষ্ট পানি দান করো। সুনানে আবু দাউদ : ৫০৯৯
পাশাপাশি বৃষ্টির পানি স্পর্শ করাও নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। সুযোগ থাকলে মাঝেমধ্যে নবীজির (সা.) এই সুন্নতের ওপর আমল করার নিয়তে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করার চেষ্টা করতেন। হযরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমরা হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি নামল। হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন তার পরিধেয় (বস্ত্র) প্রসারিত করলেন, যাতে পানি তাকে স্পর্শ করতে পারে। আমরা বললাম, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কারণ তা তার রবের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।’ সহিহ মুসলিম: ৮৯৮
অতি বৃষ্টি বন্ধে দোয়া
অতি বৃষ্টি হলে তা বন্ধের জন্য হযরত মুহাম্মদ (সা.) দোয়া পড়তেন। হযরত আনাস (রা.) বলেন, ‘এক জুমার দিন হজরত মুহাম্মদ (সা.) খুতবা দেওয়া অবস্থায় এক সাহাবি মসজিদে প্রবেশ করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল আমাদের জন্য বৃষ্টির প্রার্থনা করুন।’
তখন হযরত মুহাম্মদ (সা.) দুই হাত সম্প্রসারিত করে দোয়া করলেন- উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি। ’ অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের আশপাশে, টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বৃষ্টি বর্ষণ করুন। (বুখারি ৯৩৩; মুসলিম ৮৯৭)
আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে বৃষ্টির সময়ে উত্তম আমল যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এম এইচ/
Discussion about this post