মালদ্বীপে অবস্থান করা ভারতীয় সেনাদের আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে সরিয়ে নিতে বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু। রোববার তিনি ভারত সরকারকে তাদের সেনা সরিয়ে নিতে বলেন। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের মুখ্যসচিব আবদুল্লাহ নাজিম ইব্রাহিম সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।
আবদুল্লাহ নাজিম ইব্রাহিম বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মালেতে চলমান বৈঠকে এই তথ্য সরাসরি জানানোর জন্য মালদ্বীপের প্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ক্ষমতায় আসার আগেই নির্বাচনী প্রচারের সময় মুইজ্জু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ভারতীয় সেনাদের দেশ থেকে বের করে দেবেন। ক্ষমতায় আসার পর সেই কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। তবে এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠকে বসে দুই দেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বৈঠক হয় মুইজ্জুর।
এ পর্যন্ত ১২ বার এই ইস্যুতে ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল, মুইজ্জু তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসবেন। কিন্তু সম্প্রতি মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ করা ইস্যুতে আবারও সেনা সরানোর ইস্যুটি সামনে আসে। এবার মুইজ্জু তাঁর শেষ সিদ্ধান্তই জানিয়ে দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, মালদ্বীপে ভারতীয় সেনার সংখ্যা ৭৭ জন। তবে আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, এই সংখ্যাটি ৮৮।
ভারত–মালদ্বীপ সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই শনিবার ভারতকে এক হাত নেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু। চীনে পাঁচদিনের সফর শেষে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা ছোট হতে পারি, এ কারণে আমাদের ধমক দিয়ে কথা বলার লাইসেন্স আপনাদের নেই।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ করে পোস্ট দেওয়ায় সম্প্রতি বরখাস্ত হতে হয় মালদ্বীপের তিন মন্ত্রীকে। বরখাস্ত হওয়া মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী হলেন মারিয়াম শিউনা, মালশা ও হাসান জিহান।
সম্প্রতি মোদি ৩৬টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত দেশের সবচেয়ে ছোট স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ সফর করেন। ৩২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ওই অঞ্চলের পর্যটনশিল্প নিয়ে প্রচার চালানোই ছিল তাঁর সফরের উদ্দেশ্য। এই মন্ত্রীরা মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরের কিছু ছবি-ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে শেয়ার করে তাঁকে কটাক্ষ করেন।
এমন পরিস্থিতিতে মালদ্বীপ সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সরকারি পদে থাকা অবস্থায় যাঁরা এ ধরনের পোস্ট করেছেন, তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, এই ঘটনার পরই ভারতীয় অনেকে মালদ্বীপকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন। এদের বেশির ভাগই পর্যটক। এমন এক সময়ে এই ঘটনা ঘটে, যখন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু চীন সফরে ছিলেন। এর মধ্যেই তিনি চীনকে আহ্বান জানিয়েছেন আরও বেশি পর্যটক পাঠাতে।
তিন মন্ত্রীতে বরখাস্ত করা ইস্যুতে চীনা সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস বলছে, এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করার মানসিকতা রয়েছে ভারতের। মালদ্বীপেও এটি করতে চাইছে তারা। এতে চীনকে যাতে যুক্ত বা দায়ী না করা হয়, সে জন্য বেইজিং দিল্লীকে সতর্ক করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এমনকি প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে নিজেদের নীতি বদলানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ–এশিয়ান স্টাডিসের ডেপুটি ডিরেক্টর লিন মিনওয়াং বলছেন, পররাষ্ট্রনীতিতে এরই মধ্যে বদল এনেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। ভারতের চেয়ে চীনকেই বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন তিনি। তবে অনেকেই বলছেন, তিনি ইচ্ছে করে এমন করছেন না। তিনি আগে দেশের ভালো চান, পরে পররাষ্ট্রনীতি।
এ জেড কে/
Discussion about this post