ভারতের উত্তর প্রদেশে হালাল সার্টিফায়েড প্রোডাক্ট তথা হালাল সনদযুক্ত পণ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শনিবার (১৮ নভেম্বর) এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন।
আজ রোববার (১৯ নভেম্বর) থেকেই ‘হালাল’ সনদযুক্ত সব ধরনের পণ্য নিষিদ্ধ। ফুড কমিশনারের অফিসের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘মানুষের স্বাস্থ্যের স্বার্থে এই মুহূর্ত থেকে উত্তরপ্রদেশে হালাল সার্টিফায়েড পণ্যের উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলো।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, উত্তর প্রদেশে ভুয়া নথি দেখিয়ে হালাল সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে।
এই অভিযোগের পর গত শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) এ মর্মে রাজ্যের একাধিক হালাল সার্টিফিকেট প্রদানকারী সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে রাজ্য পুলিশ। সেই এফআইআরের একদিন পরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিলো প্রশাসন। তবে রপ্তানির জন্য উৎপাদিত ‘হালাল’ পণ্যগুলো নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত।
উত্তর প্রদেশ সরকার আরও বলেছে, যদি কেউ ‘হালাল’ খাদ্যপণ্য উৎপাদন বা বিক্রি করেন এবং হালাল সনদযুক্ত ওষুধ, মেডিক্যাল ডিভাইস বা কসমেটিক্স বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তবে ওই ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যোগী সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, খাবার সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে হালাল একটি ভিন্ন পদ্ধতি হওয়ায় খাবারের গুণমান নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, যা খাদ্য সুরক্ষা আইনের ৮৯ ধারা অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। খাবারের গুণমান নির্ধারণ করার অধিকার কেবল কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের রয়েছে।
বেশ কিছু মেডিসিন, মেডিক্যাল ডিভাইস ও কসমেটিক্স পণ্যেও হালাল সার্টিফিকেট থাকে। উত্তর প্রদেশ সরকার জানিয়েছে, সরকারি নিয়মে কোথাও ওষুধ বা কসমেটিক্সে হালাল সার্টিফিকেশন মার্কিংয়ের নিয়ম নেই। ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স আইন, ১৯৪০-তেও এই সংক্রান্ত কোনও উল্লেখ নেই।
‘হালাল’ সার্টিফিকেট হলো একটি গ্যারান্টি যে, খাবারটি ইসলামী আইন অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে এবং মুসলমানদের খাওয়া নিষিদ্ধ এমন কোনো উপাদান থেকে এটি মুক্ত। ভারতের একাধিক সংস্থা এই সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জমিয়ত উলামা হিন্দ হালাল ট্রাস্ট দিল্লি, হালাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া মুম্বাই, জমিয়ত উলামা মহারাষ্ট্র।
গত কয়েক বছর ধরেই ভারতে ‘হালাল’ সনদযুক্ত খাবার ও পণ্যের চাহিদা বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে মুসলমানরা হালাল লেখা খাবার ও পণ্য ক্রয় করেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও ‘হালাল’ সনদযুক্ত খাবার ও পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, দুগ্ধজাত পণ্য থেকে শুরু করে মাংস, সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বহু জিনিসের ওপর হালাল সার্টিফিকেট দিয়ে বিক্রি করা হয়। ভুয়া ‘হালাল’ সার্টিফিকেট ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
সেই অভিযোগ থেকেই শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) উত্তর প্রদেশের হযরতগঞ্জ থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে হালাল ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড চেন্নাই, জমিয়ত উলামা হিন্দ হালাল ট্রাস্ট দিল্লি, হালাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া মুম্বাই, জমিয়ত উলামা মহারাষ্ট্র’র মতো হালাল সার্টিফিকেট দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজ্যে এ ধরনের পণ্যের বাজার দেখা যায়, যা জনগণের আস্থার নিছক লঙ্ঘন। কোনও অধিকার ছাড়াই জাল নথির মাধ্যমে হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করে বিভিন্ন কোম্পানি অন্যায্য মুনাফা অর্জন করছে। মানুষের অন্ধ ধর্মবিশ্বাসকে হাতিয়ার করে কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছে। ‘হালাল’ লেখা পণ্যের কারণে অন্য সংস্থার একই উপাদানে তৈরি পণ্য মার খাচ্ছে। ওই এফআইআর দায়েরের পরেই জল্পনা চলছিল যে, হালাল লেখা খাবারের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে যোগী আদিত্যনাথ সরকার।
জমিয়ত উলামা হিন্দ হালাল ট্রাস্ট একটি বিবৃতিতে অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে।
Discussion about this post