গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলায় হাসিবুল ইসলাম বাদশা (৪০) নামের এক ওষুধ (ফার্মেসি) ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঘটনার সময় নিহতের বাড়িতে প্রবেশ করে স্ত্রী ও শ্যালিকাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) দিনগত রাত ৩টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড (মসজিদ মোড়) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটক দুইজন হলেন- মাওনা (মসজিদ মোড়) দারগারচালা এলাকার বাসিন্দা অন্তর (২০) এবং রুমান (২০)।
স্থানীয়রা জানান, নিহত হাসিবুল ইসলাম বাদশা বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ইলোহার গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রায় এক যুগ আগে শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা (মসজিদ মোড়) এলাকায় জমি কিনে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি মসজিদ মোড় এলাকায় মামণি ফার্মেসি দিয়ে ওষুধ ব্যবসায় পরিচালনা করতেন। হাসিবুল এলাকাবাসীর বিপদের খবর পেলেই ছুটে যেতেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সহযোগিতা করতেন। তিনি এলাকায় সকলের কাছে ভালো মানুষ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কারও সঙ্গে তার কোনো বিরোধ ছিল না।
নিহত হাসিবুল ইসলামের শ্যালক ও মাইক্রোবাসচালক জাহিদুল ইসলাম শিমুল হোসেন বলেন, ঢাকায় আত্মীয়ের বাসা থেকে রাত প্রায় আড়াইটার দিকে মাওনা চৌরাস্তা (মসজিদ মোড়) বাসায় আসি। গাড়ি থেকে নারীরা নেমে যাওয়ার পর কিশোর গ্যাং-প্রধান রুবেলসহ তার ৭-৮ জন সহযোগী মাইক্রোবাসের সামনে এসে দাঁড়ায়। তখন রুবেল দুলাভাইকে (হাসিবুল) বলে, তোরা এখানে ভাইসা আসছচ, তোদের উড়াইয়া দিমু। তখন দুলাভাই বলতেছে ভাগিনা (রুবেল) তোমরা চলে যাও। তোমরা আমার কাছের লোক না? এ কথা বলামাত্রই রুবেল ও তার সঙ্গে থাকা ২-৩ জন দুলাভাইকে কিল-ঘুষি মারতে থাকলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অন্যরা বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে নিহতের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ও শ্যালিকা সালমা আক্তরের গলার চেইন ছিনিয়ে নেয়। এ সময় বাধা দেওয়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা সালমার স্বামী হানিফকে (২৯) মারধর করে।
নিহতের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার বলেন, কিশোর গ্যাং-প্রধান রুবেল ও তার সঙ্গে থানা অন্যরা মাদকাসক্ত ছিল। আমার স্বামী বারবার তাদের পরিচয় দেয় এবং রুবেলকে ভাগিনা বলে ডাকে। রুবেলের মাথায় এবং পিঠে হাত বুলিয়ে তাকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। তারা আমার স্বামীর অনুরোধ না শুনে তাকে কিল, ঘুষি এবং লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। রুবেল ও তার সহযোগীরা বাসার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আমাকেসহ আমার ছোট বোনকে লাঞ্ছিত করে গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। পরে হাসিবুলকে স্থানীয় আল-হেরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দ্রুত শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক আসমাউল হুসনা বলেন, রাতের ওই সময়ে হাসিবুল ইসলামকে তার স্বজনরা মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারী অন্তর ও রুমানকে আটক করা হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, হাসিবুল ঢাকায় তার আত্মীয়ের বাসা থেকে গভীর রাতে শ্রীপুরের মাওনার নিজ বাসার সামনে হামলার শিকার হন। হামলার ঘটনায় জড়িত অন্তর ও রুমানকে রাতেই আটক করা হয়েছে। হামলাকারী পলাতক রুবেলসহ তার অন্য সহযোগীদের আটকের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এ ইউ/
Discussion about this post