‘আপনি আপনার আসন থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন নিশ্চিত। তবে সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। পার্টি ফান্ডেরও বিষয় আছে। একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হচ্ছে। ২০ কোটি টাকা পাঠাবেন। একবারে নয়, প্রতি সপ্তাহে ৫ কোটি করে পাঠালেই চলবে।’ এভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নানা পরিচয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে একটি প্রতারক চক্র।
তাদের টার্গেটের তালিকায় ছিল এ বছর নতুন মনোনয়নপত্র কেনা কিংবা হঠাৎ করে রাজনৈতিক নেতা বনে যাওয়া বিত্তশালীরা। চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।
ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, বাবা তার মেয়েকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন প্রতারক চক্রটি। তারা কখনো গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আবার কখনো ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রী পরিচয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফোন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিশাল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করেছিলেন। সম্প্রতি নোয়াখালী থেকে বাবা মো. ইয়াসিন ও মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ইয়াসিন তার মেয়েকে নিয়ে গড়েন নির্বাচনকেন্দ্রিক এ অভিনব প্রতারণার জাল। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফোন করে বিভিন্ন পরিমাণের টাকা দাবি করেন তারা। কখনো বাবা আবার কখনো মেয়ে ফোন করতেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি এক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে ফোন করে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার কথা বলে দলীয় ফান্ডে ২০ কোটি টাকা জমা দেওয়ার দাবি করেন তারা। টাকার অঙ্ক অস্বাভাবিকভাবে বেশি হওয়ায় বিষয়টি দলের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে জানান ওই মনোনয়নপ্রত্যাশী। পরে ডিবির কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, চক্রটি গণভবনের নাম ব্যবহার করে এমন প্রতারণার অপচেষ্টা চালায়। এরপর ফোনকল করা ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দারা দেখতে পায় চক্রটির সদস্য কেবল বাবা ও মেয়ে। তারাই বিভিন্ন জনকে ফোন করেছেন। গ্রেপ্তারের সময় উদ্ধার হওয়া মোবাইলে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের রেকর্ডও পাওয়া গেছে। মনোনায়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই এ ফাঁদে পা দিয়ে কিছু টাকাও দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ টাকা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
Discussion about this post