বয়স্ক এক ভদ্রলোকের অভিযোগ, তাঁর শরীরের মাংসপেশি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে শরীরে দুর্বলতা বোধ করেন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো স্নায়ুরোগও পাওয়া যায়নি। তাহলে কেন মাংসপেশি দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে? এটা কি কোনো সমস্যা? মেডিকেলের ভাষায় এটাকে বলে সার্কোপেনিয়া। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এ সমস্যা কেন হয় আর এর প্রতিরোধে কী কী করনীয় রয়েছেঃ-
সার্কোপেনিয়া কী: সার্কোপেনিয়া হচ্ছে বয়সজনিত মাংসপেশির ক্ষয় ও আয়তন কমে যাওয়ার সমস্যা। ফলে মাংসপেশির শক্তি কমে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে শারীরিক দুর্বলতা।
কাদের বেশি হয়: এটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ৬০ বছরথেকে শুরু করে অধিক বয়স্কদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখতে পাওয়া যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটিও বাড়তে পারে। অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের এই প্রবণতা আরও বেশি।
কেন হয়: গবেষণায় দেখা গেছে, মাংসপেশির তন্তু ও কোষ সংখ্যায় ও আয়তনে কমে যাওয়ার ফলে এ রকম হয়। শারীরিক পরিশ্রম কম করলে এটি বেশি হয়। বয়স বাড়লে অনেকে শরীরচর্চা কমিয়ে দেন, যা সার্কোপেনিয়া হতে সহায়তা করে। বিভিন্ন রোগের কারণে অনেকে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়। শয্যাশায়ী না হলেও বিভিন্ন রোগের কারণে যাঁরা কায়িক পরিশ্রম বা শরীরচর্চা করতে পারেন না, তাঁদেরও মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া কিছু হরমোন, যেমন ইনসুলিন, টেসটোস্টেরনের পরিবর্তন ও ঘাটতিতে এ রকম হয়। কিছু ক্রনিক রোগ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা থাকলেও এ রকম হতে পারে। যাঁদের শরীরে আমিষ বা প্রোটিনের ঘাটতি আছে, তাঁদেরও এ সমস্যা হয়। অনেকে ভাবতে পারেন, যাঁরা স্থূল (মানে বিএমআই বেশি), তাঁদের এ রকম হওয়ার আশঙ্কা নেই। গবেষণায় বরং উল্টোটা দেখা গেছে, তাঁদের সার্কোপেনিয়া হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
লক্ষণ ও উপসর্গ:সবচেয়ে বেশি যে উপসর্গটি দেখা যায়, সেটি হলো শারীরিক দুর্বলতা বা মাংসপেশির দুর্বলতা। অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া, ধীরে ধীরে হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হওয়া—এ রকম উপসর্গের কথাও কেউ কেউ বলেন। অনেকে বলেন, তাঁরা হাঁটতে গিয়ে পড়ে যান।
করণীয়:সার্কোপেনিয়ার জন্য বিশেষ কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন জীবনচর্চার পরিবর্তন। নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে শরীরকে সক্রিয় রাখা জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে। একটি নিদ্রিষ্ট রুটিনের মধ্যে চলতে পারলে ভালো। এ ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। শুরু থেকে নিয়মতান্ত্রিক জীবনচর্চায় সার্কোপেনিয়া সহজে প্রতিরোধ সম্ভব।
এস আই/প্রবাস খবর
Discussion about this post