পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে নির্যাতন করে মৌখিকভাবে তালাক দিয়ে শিশুকন্যাকে (৮ মাস) ছিনিয়ে নিয়ে দেড়লাখ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে কাইয়ুম বিশ্বাস নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসুতি ইউনিয়নের রামপাশা গ্রামে। এ ঘটনায় ফরিদপুর বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন শিশুর মা পপি বেগম। এরপর গত ২৮ এপ্রিল আদালত নগরকান্দা থানা পুলিশকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই মামলায়- স্বামী কাইয়ুম বিশ্বাস (৪০), তার তিন বোন মিতা আক্তার, বুলি বেগম, সাগরী আক্তারসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করেছেন।
এ ঘটনার পর থেকে মা পপি বেগম থানা পুলিশ থেকে শুরু করে আদালতে বহুবার গিয়েছেন মেয়েকে ফিরে পেতে। আদালত প্রতিবেদন ও শিশুটিকে খুঁজে পেতে নির্দেশ দিলেও তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। মঙ্গলবার (৬ মে) নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ সফর আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আদালত আমাদের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে, সে অনুযায়ী কাজ চলছে। কিন্তু অভিযোগে বাচ্চাটি বিক্রির যে ঠিকানা দেয়া হয়েছে, সেখানে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। শিশুটিকে খুঁজে পেলে আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মা অথবা বাবার কাছে ওই শিশুটিকে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
জানা যায়, তিন বছর আগে মুকসুদপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের হান্নান সরদারের মেয়ে পপি বেগমের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা উপজেলার ফুলসুতি ইউনিয়নের রামপাশা গ্রামের মানিক বিশ্বাসের ছেলে কাইয়ুম বিশ্বাসের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। এরমধ্যে তাদের একটি মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। পরবর্তীতে গত পাঁচ মাস আগে কলহের জের ধরে তাদের তালাক হয়।
ভুক্তভোগী পপি বেগম জানান, তালাকের সময় জোর করে তার শিশু তানহাকে কোল থেকে কেড়ে রেখে দেন স্বামী। পরে তার স্বামী ওই শিশুকে একই উপজেলার শাখরাইল গ্রামের কুবাদ শেখের মেয়ে কহিনুর বেগমের কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেন। আর এই বিক্রির মধ্যস্থতা করেন নগরকান্দার দলিল লেখক আলমগীর তালুকদার।
পপি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাচ্চাডারে দেখবার জন্য রাতে ঘুম হয় না, খাবার পারি না। আমার কলিজাডা শুকায় গেছে। যার কাছে মেয়েকে বিক্রি করা হয়েছে তার মায়ের পা পর্যন্ত জড়ায় ধরছি, তবুও দেখতে দেয় নাই। ওরা বলছে- আমরা দেড়লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি, যে বিক্রি করছে তার কাছে যাও।’
ঘটনাটি নিয়ে কাইয়ুম বিশ্বাসের বোন মিতা আক্তারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলে অপর একজন রিসিভ করে মিতার স্বামী পরিচয় দেন এবং ব্যস্ত আছেন বলে কেটে দেন। এ দিকে শিশুটির বাবা কাইয়ুম বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এম এইচ/
Discussion about this post