রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় ইসরাইলি সেনাদের বর্বরতায় বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চিয়তা। যুদ্ধ-সংঘাত ছাড়াও বৈষ্ণিক উষ্ণতা ও অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা সংকট অহরহই দেখা দিচ্ছে। অশান্তির জালে মোড়ানো সেই বিশ্বের চোখ এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।
মাত্র ৫ দিন পরই অনুষ্ঠিত হবে দেশটির এযাবৎকালের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস নিয়ে প্রচারণার শেষ মুহূর্তে পৌঁছেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস। দায়িত্বের ভার পড়বে কার হাতে? নির্বাচনি ফলাফলে কি প্রভাব পড়বে বিশ্বে?
এমন প্রশ্নেই চলছে নানা আলোচনা। এই অস্থির সময়ে কমলা কি বাইডেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন, নাকি স্থিরতা ফেরাতে তৈরি করবেন নতুন কোনো পথ? সেই হিসাবও কষছেন বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে মার্কিন নির্বাচনে বৈশ্বিক পরিণতি নিয়েই উদ্বিগ্ন এখন গোটা বিশ্ব।খবর বিবিসির।
গাজা যুদ্ধের পরিণতি
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও কমফোর্ট ইরো বলেছেন, ‘শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে ফলপ্রসূ আন্তর্জাতিক অঙ্গন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, কিন্তু সংঘাত সমাধানে সহায়তা করার শক্তি হ্রাস পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যার জেরে যুদ্ধ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইরো বলেছেন, কমলার জয় বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে ধারাবাহিকতার প্রতিনিধিত্ব করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের দৃঢ় সমর্থনের প্রতিধ্বনি করেছেন। ডেমোক্রেট প্রার্থী হওয়ায় একই পথে চলতে পারেন কমলা। এদিকে গাজা যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প অনেকটা অগ্রগামী পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে মনে করেন ইরো।
ইউক্রেন যুদ্ধ
ইরো বলেছেন, ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ সমর্থন করেন না। ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চান। সাম্প্রতিক এক সমাবেশে ট্রাম্প জোর দিয়ে আরও বলেছেন, এই যুদ্ধ সংঘাত থেকে অবশ্যই আমাদের বের হতে হবে।
অন্যদিকে কমলা বলেছেন, আমি ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াবো এবং আমি এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে বিজয়ী করতে কাজ করব।’ তবে যেই নির্বাচিত হোক না কেন, বিশ্বের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইরো।
জলবায়ু সংকট
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জলবায়ু সংক্রান্ত সংগঠন ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ অ্যাকশনের সরকার ও রাজনৈতিকবিষয়ক পরিচালক অ্যারিয়েল মগের বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এবার মার্কিন নির্বাচনের প্রচারে জলবায়ু সংকট খুব একটা গুরুত্ব পায়নি বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেছেন, অর্থনৈতিক সংকট, অভিবাসন ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নির্বাচনি প্রচারে যতটা আলোচনা হচ্ছে, সেই তুলনায় তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না জলবায়ু পরিবর্তন। নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতিষ্ঠিত বিশ্বনেতাদের গ্রুপ এল্ডার্সের চেয়ার মেরি রবিনসন মনে করেন, ট্রাম্প জলবায়ু সংকট নিরসনে খুব ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে পারবেন না। তবে কমলা এ বিষয়ে অগ্রগতির কথা বললেও নির্বাচিত হলে কি করবেন তাই এখন দেখার বিষয়।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট
গেল মে মাসে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন মার্কিন অর্থনীতি ছোট হয়ে আসছে। পাঁচজন আমেরিকানের মধ্যে তিনজন বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আছে। আর এ জন্য বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দায়ী করছেন তারা। নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে দেশের অর্থনীতি নিয়ে হতাশা তত ঘুরপাক খাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। কারণ দেশটির অর্থনীতি মারাত্মকভাবে গতি হারিয়েছে। বাইডেন অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা এনে দিতে না পারলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতীতের ইতিহাসও ভালো খবর দেয় না। তবে প্রচারণায় কমলাকে অর্থনীতিতে বেশ জোর দিতে দেখা গেছে।
এম এইচ/
Discussion about this post