নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার দক্ষিণে সাগর উপকূলে মেঘনা নদীর মোহনায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা। কয়েক দিন ধরে একাধিক জলদস্যু বাহিনী জেলেদের থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের পাশাপাশি তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অন্যদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে জলদস্যু কেফায়েত বাহিনীর হামলায় গত শনিবার পর্যন্ত তিন জেলে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো সাত-আটজন।
এ ঘটনায় সুবর্ণচরের পাশাপাশি পাশের হাতিয়া ও সন্দ্বীপ উপজেলার জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সুবর্ণচর উপজেলার দক্ষিণে বসবাসরত মেঘনা নদীর জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীর দক্ষিণাঞ্চলে দুই বছর ধরে একাধিক জলদস্যু বাহিনী গড়ে উঠেছে। তারা ইলিশ ধরার স্থান (খোপ) দখলে নিয়ে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, বর্তমানে মেঘনা নদীর ভাসানচর, স্বর্ণদ্বীপ ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে জলদস্যু কেফায়েত, অলি মাঝি, মাইনউদ্দিন, আলতাফ, নুরুদ্দিন, জাফর ও জাহাঙ্গীর খোপ দখল করে জেলেদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছেন।
গত বুধবার রাতে জলদস্যু কেফায়েত বাহিনী আলাউদ্দিনের নিয়ন্ত্রিত স্বর্ণদ্বীপ-সন্দ্বীপ চ্যানেলের একটি খোপ দখল করতে যায়। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষকালে দুই জেলে নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন আরো সাত-আটজন। তাঁদের মধ্যে আরো একজনের চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন সুবর্ণচরের পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের পূর্বচর মজিদ গ্রামের আবদুর রহমান (৩৩), একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ওরফে রাজু (১৬) ও চর আলাউদ্দিন এলাকার ইসমাইল হোসেন (৩০)। এ ঘটনার পর নদীর ওই অংশে জেলেরা মাছ শিকারে যাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম জানান, মেঘনা নদীতে আবার জলদস্যুদের তাণ্ডব বেড়ে গেছে। তাদের প্রতিহত করা না গেলে জেলেরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকবেন। তিনি অবিলম্বে মেঘনা নদীর জলদস্যুদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর জানান, নদীতে চাঁদাবাজির বিষয়টি তাঁর জানা নেই। নদীর বিষয়টি কোস্ট গার্ড দেখে থাকে। তবে তিনি তিন জেলের নিহত হওয়ার খবরটি শুনেছেন। এ ঘটনায় সন্দ্বীপ থানায় মামলা করা হয়েছে।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিন সরকার বলেন, ‘মেঘনা নদীতে কোনো জলদস্যু আছে কি না, তা আমার জানা নেই। তবে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিন জেলে নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা গত রবিবার শান্তিপূর্ণ মানববন্দন করেছে। আমরা তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছি। একই সঙ্গে তাদের দাবিদাওয়ার বিষয়টি আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব।’
সূত্র: কালের কন্ঠ
এস/এইচ
Discussion about this post