বর্তমান সময়ের আলোচিত বিষয় প্রশ্নপত্র ফাঁস। বিষয়টি সামনে আসার পর থেকেই বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রশ্ন উঠছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) ওপর।
ক্যাডার, নন ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হওয়ার এসব ঘটনা কীভাবে ঘটছে বা কারা এসবের সঙ্গে জড়িত তা বের করতে তদন্তে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
সম্প্রতি বেশ কিছু তথ্য সামনে চলে এসেছে। জানা গেছে, পিএসসির একজন সাবেক মেম্বার তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এই শর্তে, বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে দিব, তবে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। শ্বশুর ছিলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি। শুধু মেয়ের জামাই নয়, জামাইয়ের বোনকেও একই কায়দায় বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস পরীক্ষায় জামাই ও তার বোনকে উত্তীর্ণ করেছেন ফাঁস করা
প্রশ্নের মাধ্যমে। জামাইও তার কথা রেখেছেন, উত্তীর্ণ হওয়ার পর পিএসসির তৎকালীন ওই মেম্বারের মেয়েকে বিয়ে করেছেন।
আরও জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে ব্যাপকহারে প্রশ্নফাঁস হতো। প্রশ্নফাঁসের অফিস হয়ে দাঁড়িয়েছিল পিএসসি। যেখানে যা খুশি করা যেত। প্রিলিমিনারি ও লিখিত দুই পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দলীয় নেতা থেকে শুরু করে রিকশাচালক, পান দোকানদারসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রশ্নফাঁসের সিন্ডিকেটে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলায় একজন আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান প্রশ্নফাঁসে জড়িত ছিলেন। তার নাম এখন অনেকের মুখে মুখে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। তার দলে থাকার সুযোগ নেই। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সিআইডির পর্যালোচনায় ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে ২৪টি জেলার কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি। মোট ৭০ জন উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে নারী মাত্র সাত জন। ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ১৬ জেলায় কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি। মোট ১০০ জন উত্তীর্ণ হয়, এর মধ্যে নারী মাত্র চারজন। এখানে কোটা পূরণ করা হয়নি। ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ১৪ জেলায় কোনো প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়নি। মোট ১০০ জন উত্তীর্ণ হন, এর মধ্যে ৯ জন নারী। সিআইডি এই তিনটি বিসিএস পরীক্ষা পর্যালোচনা করেছে।
জানা গেছে, যেসব জেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, তারাই উত্তীর্ণ হয়েছেন। শুধুমাত্র পুলিশ ক্যাডার নয়, সকল ক্যাডারে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্নফাঁসের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা এই সুবিধা পেয়েছে।
প্রশ্নফাঁস চক্রের দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিসিএস পরীক্ষার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের অনেকে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ এ/
Discussion about this post