অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মহারণ শুরু। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে শুরু হবে। এরই মধ্যে চূড়ান্ত ভোটের দিনের আগে প্রায় ৮ কোটি মার্কিনি নির্বাচনে আগাম ভোট দিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কারা?
কমালা হ্যারিস
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস।৬০ বছর বয়সী হ্যারিস বিজয়ী হলে তিনি প্রথম নারী, প্রথম অশ্বেতাঙ্গ নারী ও প্রথম এশীয় নারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট হবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প
রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট-এর দায়িত্ব পালন করেছেন।তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। বিজয়ী হলে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বজ্যেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট।
এছাড়া, বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে চারটি ছোট দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন ভোটাররা। তারা হলেন: জিল স্টেইন (গ্রিন পার্টি), চেইস অলিভার (লিবারটারিয়ান পার্টি), রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র (স্বতন্ত্র, নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেও এখনো বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যের ব্যালটে তার নাম রয়েছে), করনেল ওয়েস্ট (স্বতন্ত্র)।
নির্বাচনে কারা ভোট দিতে পারেন?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শুধু দেশটির নাগরিকরা ভোট দিতে পারেন। তাদের বয়স নির্বাচনের দিন বা তার আগেই ১৮ হতে হবে। পাশাপাশি, আবাসন সংক্রান্ত কিছু শর্ত মানতে হবে, যা একেক অঙ্গরাজ্যে একেক রকম।
কখন ভোট দেওয়া যায়?
প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে এই সময়কাল ভিন্ন। ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে নির্বাচনের দিন সশরীরে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা থাকে।বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগেও ভোটের ব্যবস্থা থাকে। ভোটাররা চিঠির মাধ্যমে পূরণকৃত ব্যালট পেপার পাঠাতে পারেন অথবা কোনো সুনির্দিষ্ট ড্রপ-অফ স্থানে তা জমা দিয়ে যেতে পারেন।এছাড়া, বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোটেরও ব্যবস্থা থাকে।
নির্বাচনের ফলাফল কখন জানা যাবে?
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ভোটগ্রহণ হলেও চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে কবে?
প্রতিটি অঙ্গরাজ্য নিজদের নিয়ম অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ করে থাকে। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এবারের ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল কখন জানা যাবে তা নির্ভর করছে দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেমন তীব্র হয় তার ওপর।
ইলেক্টোরাল কলেজ কী ও তা কিভাবে কাজ করে?
আমেরিকার ভোটাররা যখন ভোট দেন, তখন তারা সরাসরি তাদের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে তা দেন না। কারিগরি দিক দিয়ে চিন্তা করলে, তারা তাদের পছন্দের ইলেক্টর বেছে নেন, যারা ইলেক্টোরাল কলেজের অংশ। এরপর এই ইলেক্টররা প্রেসিডেন্ট বেছে নেন।ইলেক্টোরাল কলেজ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে প্রতিনিধি বা ইলেক্টর বেছে নেয়া হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টরের সংখ্যা ভিন্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২ নম্বর অনুচ্ছেদে এই পদ্ধতিটি সম্পর্কে বর্ণনা করা আছে। ইলেক্টরের সংখ্যা ৫৩৮, যা কখনো বদলায় না। এই সংখ্যাটি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের মোট সদস্য সংখ্যার সমান—৪৩৫ জন প্রতিনিধি, ১০০ জন সেনেটর ও কলাম্বিয়া ডিসট্রিক্টের তিন ইলেক্টর। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেক্টোরাল ভোট জিততে হয়, যা হলো অন্তত ২৭০।
অন্যান্য কী নির্বাচন হচ্ছে?
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি, নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভার ৪৩৫ আসন ও উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৪ আসনে নির্বাচন হবে। ৫০ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ১১টিতে নতুন গভর্নর পদে নির্বাচন হবে। সব মিলিয়ে এ বছর পাঁচ হাজারেরও বেশি স্থানীয়, অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এসব নির্বাচনের পাশাপাশি অনেক অঙ্গরাজ্যে রেফারেন্ডাম নামেও এক ধরনের ভোট হতে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে ব্যালটের মাধ্যমে গর্ভপাত আইন থেকে শুরু করে কর নীতিমালা, মারিজুয়ানার ব্যবহারসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেন।
আর এম/
Discussion about this post