আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে নারী চিকিৎসকের নির্যাতন-মৃত্যু নতুন করে নারীনিগ্রহের মতো ঘটনাকে সামনে এনেছে। এরপরই নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিনোদন দুনিয়ায় নারী কর্মীদের হেনস্তার ঘটনা। গত মাসে প্রকাশ্যে আসা হেমা কমিটির রিপোর্ট মুখোশ খুলে দিয়েছে দক্ষিণী দুনিয়ার প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের।
ডিরেক্টর্স গিল্ড থেকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) হলেন পরিচালক অরিন্দম শীল। শোনা যাচ্ছে, যৌন হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আর সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্মাতাকে পাঠানো হয়েছে নোটিশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, ই-মেইল মারফত অরিন্দম শীলকে সাময়িক বরখাস্তের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সদস্য পদ সংখ্যা (১৯৩) উল্লেখ করে জানানো হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠেছে। যার প্রাথমিক প্রমাণ রয়েছে এবং তা অত্যন্ত উদ্বেগের। এমন অভিযোগ সংগঠনের পক্ষে ক্ষতিকর। সেই কারণেই ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিচালককে সাসপেন্ড করা হচ্ছে অথবা যতদিন না পর্যন্ত পরিচালকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে, ততদিন এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
সংগঠনের সভাপতি সুব্রত সেন বলেছেন, সুরক্ষা বন্ধু কমিটি ঘোষণার পরই আমরা জানিয়েছিলাম, পরিচালকদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ এলে আমরা পদক্ষেপ করব। কয়েকদিন আগে বাংলা বিনোদন দুনিয়ার এক অভিনেত্রী অভিযুক্ত পরিচালকের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগ এনে নারী কমিশনের দ্বারস্থ হন।
সুব্রত আরও বলেন, নারী কমিশনের থেকে অভিযোগ আসার পরেই আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসি। সবার সম্মতিতে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিচালকের বিরুদ্ধে এই বিশেষ নির্দেশ কার্যকর হবে। যেদিন তিনি ‘নির্দোষ’ শংসাপত্র পাবেন, সেদিন থেকে আবার আগের মতো কাজ শুরু করতে পারবেন, জানিয়েছেন সুব্রত। অরিন্দমের নাম উল্লেখ না করে এ-ও জানিয়েছেন, এরপরও পরিচালক যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান বা তার সঙ্গে যদি কোনও প্রযোজক কাজ করেন সেক্ষেত্রে কোনও বক্তব্য থাকবে না ডিরেক্টর্স গিল্ডের।
এ বিষয়ে অরিন্দম শীল জানান, আমাকে বলা হয়েছে, শট বোঝাতে গিয়ে আমি অভিনেত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছি। কিন্তু, সেই সময়ে চিত্রগ্রাহক থেকে শুরু করে সেটের বাকি সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন। তিনি শুক্রবার নারী কমিশনে গিয়ে কথা বলেছেন। তার অনিচ্ছাকৃত কোনও আচরণের জন্য অভিনেত্রী যদি অপমানিত হয়ে থাকেন, তার জন্য তিনি আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।
অরিন্দম আরও বলেন, আমাকে চিঠি থেকে অনিচ্ছাকৃত শব্দটি বাদ দিতে বলা হয়েছিল। আমার সহকারী পরিচালক ও ফোটোগ্রাফার এবং সুরিন্দর ফিল্মসের সদস্যরা সাক্ষী হিসেবে আছেন। কিন্তু ডিরেক্টর্স গিল্ড আমার সঙ্গে কথা না বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়ে একাধিক অভিনেত্রী অরিন্দমের বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন। যদিও প্রতিবারই পরিচালক তাঁদের অভিযোগ মিথ্যা বলেই দাবি করেছেন।
এদিকে, অরিন্দমের বরখাস্তের খবর প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে মুখ খুলেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘পাপের ঘড়া উল্টোয়। ভেবেছিলাম বোধহয় নিজের জীবনে দেখে যেতে পারব না। ভগবান তুমি এই কথাটুকু যে রেখেছ, এই অনেক। ২০ বছর সময় লাগল, সে লাগুক। আমাদের জগতের সমস্ত মেয়েদের বলছি। সময় এসেছে, সম্মান দখল করার। আর ভয় নয়। গলা তুলে, আঙুল তুলে চিৎকার করে নোংরা লোকগুলোর মুখোশ টেনে ছিঁড়তে হবে। সবাই বেরিয়ে এসো। হাত ধরে একসঙ্গে সরব হই। এটা আমাদের ন্যায্য অধিকার।’
এস আই/
Discussion about this post