দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস রপ্তানি আয়। টানা তিন মাস ধরে কমছে এ রপ্তানি আয়। সর্বশেষ ডিসেম্বরের যে রিপোর্ট পাওয়া গেছে, তাতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির হিসাবে সদ্যসমাপ্ত ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানিতে আয় এসেছে ৫৩০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ কম। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে অর্জিত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৩৬ কোটি মার্কিন ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মঙ্গলবার ( ২ জানুয়ারি) রপ্তানির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, যে তৈরি পোশাকে ভর করে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য গ্রহণ করেছে সরকার, ডিসেম্বরে এসে সেই খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মাসভিত্তিক হিসাবে রপ্তানি আয়ের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটলেও তৈরি পোশাক খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। তবে সদ্যসমাপ্ত ডিসেম্বরে এসে দেখা যাচ্ছে ভরসার খাত ওভেন পোশাক রপ্তানিও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ১২ শতাংশ কমে গেছে। এ ছাড়া রপ্তানি কমেছে ক্যাপ, ফার্নিচার, কার্পেট, বাইসাইকেল, জুতা, হোম টেক্সটাইল, টেরি টাওয়েল, জাহাজ ও কাঁচা পাটের মতো সম্ভাবনাময় পণ্যে।
শুধু যে পণ্যভিত্তিক রপ্তানি আয় কমছে তাই নয়, দেশের পণ্য রপ্তানির বড় গন্তব্যগুলোতেও আয় কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে ধস নেমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর-এ পাঁচ মাসে ৩ হাজার ৬৪০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর প্রান্তিকে ৪ হাজার ৯ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, গতবারের তুলনায় চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রপ্তানি কমে গেছে প্রায় ৩৬৯ মিলিয়ন ডলারের। স্থানীয় মুদ্রায় যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪০ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকার। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ১৭ ভাগ আয় আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ফলে বৃহত্তম এ গন্তব্যে পণ্য রপ্তানি হ্রাসের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। রপ্তানি কমেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় গন্তব্য জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়ামেও। বড় বাজারগুলোর রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন সংকট নতুন করে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধের একই সময়ে শ্রম খাতের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রম আন্দোলনের ঘটনা পণ্য রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আলোচ্য সময়ে গার্মেন্ট মালিকরাও বেশ কিছু গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ করে দেন। এসবেরই প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রপ্তানি খাতে।
রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো উদ্যোক্তা। পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হান্নান গ্রুপের চেয়ারম্যান এবিএম শামছুদ্দিন সমকালকে বলেন, গত তিন মাসের মতো রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারা আগামী মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকতে পারে। এপ্রিলের আগে রপ্তনি বৃদ্ধির সুযোগ নেই। কারণ হিসেবে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির মন্থর গতির কথা উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, পোশাকের চাহিদা কমেছে এসব দেশে। তিনি তাঁর নিজের কারখানার রপ্তানি গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে কমার আশঙ্কা করছেন।
২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় কমার পাশাপাশি সার্বিক কৌশলগত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায়ও ছেদ পড়েছে। গেল ডিসেম্বরের জন্য কৌশলগত রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার। কিন্তু পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫৩০ কোটি ৮০ লাখ ৯০ হাজার ডলার যা কৌশলগত রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম।
উল্লেখ্য, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছিল প্রায় ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২ বিলিয়ন ডলার।
এস আর/
Discussion about this post