হাজারো বাঙালির হৃদয়ে দাগ কেটে যাওয়া রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছে হাইকোর্ট। আগামী ৮ মে এই বহুল আলোচিত মামলার রায় দেবেন আদালত।
আজ বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য ‘সিএভি’ হিসেবে অপেক্ষমাণ রাখেন আদালত। ওইদিনই আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, সরওয়ার আহমেদ ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
ফাঁসির আদেশ পাওয়া প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, যা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান এবং মাওলানা আরিফ হাসান সুমন।
উল্লেখ্য, মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে অন্য এক মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। যারা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন তারা হলেন—হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ এবং শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।
২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। এরপর ১৪ মার্চ চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে। পরে এটি যায় বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের বেঞ্চে, তবে দীর্ঘদিনেও শুনানি শুরু হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বোমা হামলা চালায় হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্যরা। ওই হামলায় ১০ জন প্রাণ হারান, আহত হন বহু মানুষ। হামলার পর রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর সিআইডি দুইটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে, যাতে হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এর ভিত্তিতেই বিচারিক আদালতে শুরু হয় দীর্ঘ শুনানি, যা শেষে আসে বহুল প্রতীক্ষিত রায়।
এ ইউ/
Discussion about this post