রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা বা ত্যাগের উৎসব। মুসলিমদের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ ঈদ যতটা না আনন্দের তার চেয়ে বেশি ত্যাগের। সামর্থ্যবান মুসলমানরা পরিশুদ্ধি, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। এর মাধ্যমে নিজেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে সমর্পণ করাই ঈদুল আযহার মূল মর্মবাণী।
ত্যাগের এই উৎসবে পশুরহাটে ঘুরে ঘুরে কোরবানির পশু কেনায় আনন্দ পান মুসল্লিরা। সামর্থ্যবানরা কোরবানির পশু কিনেছেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকেই শহর থেকে হাজারো ভোগান্তি পেরিয়ে গেছেন গ্রামের শিকড়ের কাছে।
ঈদগাহে জামাত আদায়ের মধ্যদিয়ে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের সব ইদগাহে প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সকাল সকাল ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ঈদগাহে নামাজ আদায় করবেন, এরপর পশু কোরবানি করবেন।
ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ত্যাগের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে পারস্পরিক ভেদাভেদ ভুলে দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ রাজনীতিকরাও ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশবাসীকে।
আরও পড়ুনঃ দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন রাষ্ট্রপতি
কোরবানির রীতি অনুযায়ী, ঈদের দিন ছাড়াও পরের দু’দিনও পশু কোরবানি করার সুযোগ রয়েছে। সে হিসেবে বুধবার আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি করা ফরজ। কোরবানির পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ বিলিয়ে দিতে হয় গরিব-মিসকিনকে। আত্মীয়দের দিতে হবে এক ভাগ।
ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্রথম জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এ ছাড়া, মন্ত্রিসভার সদস্য, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এখানে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ রাজধানীতে ১৮৪টি ঈদগাহ ও প্রায় দেড় হাজার মসজিদে ঈদের নামাজ পড়বেন মুসল্লিরা। দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ। এবার ১৯৭তম ঈদের জামাত হবে এ ঈদগাহে। অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে। ঈদের জামাতের সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এর ঐতিহাসিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোরবানি ইবাদতের মর্যাদা লাভ করেছে। আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে পরীক্ষা করার জন্য স্বীয় পুত্রকে কোরবানি করতে বললেন, তখন কোনো সংশয় তথা বিনা প্রশ্নে নিজ স্নেহাস্পদ সন্তানকে কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু আল্লাহর আদেশে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। তারপর থেকে পশু কোরবানির রেওয়াজ চালু হয়। মানবজাতিকে একনিষ্ঠ শিক্ষা দেয়াই হলো এর মর্মার্থ।
এ এ/
Discussion about this post