অসুস্থতাজনিত কারণে রমজান মাসেও অনেকের নাক, কান ও চোখে ড্রপ নিতে হয়। কিন্তু রমজানে রোজা থাকার জন্য অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে- রোজা রাখা অবস্থায় কোনো ড্রপ বা লিকুইড (তরল ওষুধ) ব্যবহার করলে রোজা হবে কিনা? এবার তাহলে এই বিষয়ে জেনে নেয়া যাক-
নাকে ড্রপ দেয়া: আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, নাকে কোনো প্রকার ড্রপ বা তরল ওষুধ ব্যবহার করলে এটি সরাসরি পাকস্থলীতে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য মুখের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করা সম্ভব না হলে নাকে রাইস টিউব ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে রোগীকে খাবার খাওয়ানো হয়ে থাকে। এ বিষয়ে চার মাযহাবের ইমামগণ একমত যে- রোজা রেখে নাকে কিছু ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে। এ জন্য রোজা রাখা অবস্থায় নাকে ড্রপ বা তেল ব্যবহার করা উচিত নয়।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) হজরত লাকিত ইবনে সাবুরাহকে (রা.) বলেছেন, তুমি অজু পরিপূর্ণ করো, তোমার আঙুলগুলো খিয়াল করো এবং নাকে ভালো করে পানি দাও। তবে হ্যাঁ, রোজা রাখলে নাকে পানি দিও না। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৭৮)
চোখে ড্রপ দেয়া: চোখে ড্রপ বা কোনো তরল ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, চোখ থেকে পাকস্থলীতে সরাসরি কোনো কিছু পৌঁছানোর সংযোগ বা মাধ্যম নেই। তবে চোখ থেকে নাক হয়ে গলায় পৌঁছাতে পারে- এই শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু চোখে ওষুধ নেয়ার পর বা সুরমা ব্যবহারের পর যদি মুখে স্বাদ অনুভব করেন বা সুরমার রং এসে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। যদিও এমনটা হয় না। যদি এমনটা না হয় তাহলে চোখে তরল ওষুধ বা ড্রপ দিলে রোজায় কোনো সমস্যা হবে না।
এ জন্য রোজা রাখা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। যদিও এটি গলায় চলে যেতে পারে। তবে হাদিসে বিষয়টি সরাসরি থাকার জন্য ফকীহগণ এটাকে জায়েজ বলেছেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি জিদ্দাহও একই কথা বলছেন। (মাজাল্লাতু মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী : সংখ্যা ১০)
এদিকে চোখে ড্রপ ব্যবহারের বিষয়টি ফিকহের কিতাবে বর্ণিত সুরমা ব্যবহারের সঙ্গে অনেকটাই এক। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস- তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) রোজা অবস্থায় চোখে সুরমা ব্যবহার করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৮৭)
কানে ড্রপ দেয়া: বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য কানে ড্রপ ব্যবহার করা হয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, কানে কিছু ব্যবহার করলে তা সরাসরি গলায় পৌঁছায় না। পূর্ববর্তী ফকিহদের মতামত ছিল, কানে কিছু ব্যবহার করলে এতে রোজা ভেঙে যাবে। চার মাযহাবই এ বিষয়ে একমত। ইমাম কাসানি (রহ.) বলেছেন, কানে যদি তেল বা ভিন্ন কিছু ব্যবহার করলে তা পেটে বা মাথায় পৌঁছায় তাহলে এর মাধ্যমে রোজা ভেঙে যাবে। (বাদায়িউস সানায়ি : ২/৯৩)
এ ধারণার ভিত্তি ছিল- কান ও গলার মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক বা সংযোগ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, কান ও গলার মাঝে কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। এ বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতামত মুফতি রফি উসমানী (হাফিজাহুল্লাহ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ, ‘মুফতিরাতুস সাওম ফি মাজালিত তাদাওয়ী’-তে তুলে ধরেছেন। এ জন্য বলা যেতে পারে, রোজা রেখে কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। (মুফতিরাতুস সাওম ফি মাজালিত তাদাওয়ী)
তথ্যসূত্র: তিরমিজি, হাদিস : ৭৭৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৮৭; মাজাল্লাতু মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী : সংখ্যা ১০; বাদায়িউস সানায়ি : ২/৯৩; আল-উম, ইমাম শাফেয়ি : ২/১১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৩; রদ্দুল মুহতার : ২/৩৯৫)
Discussion about this post