শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ এর পর এখনও বেশ সরব‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে মাঠে নামলেও শেষমেশ তা রূপ নেয় রাষ্ট্র সংস্কারের ডাকে। সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বলছে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা। সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কও রাষ্ট্র সংস্কারের নানা পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন। এর মধ্যেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে রাজনীতিতে নতুন শক্তির উত্থানের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, সময়ের প্রয়োজনে তারা রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেও রাজি। এ নিয়ে তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলছেন। ইতিবাচক সাড়া পেলে গড়ে তুলবেন নতুন রাজনৈতিক দল। তবে তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, নতুন কোনো নামে আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে প্রথম সারিতে থাকা অধিকাংশই গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামের একটি ছাত্র সংগঠনের সদস্য। মূলত নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ থেকে বের হয়ে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ও মো. নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে গত বছর এই ছাত্র সংগঠনটি করা হয়েছিল। এই সংগঠনের অনুসারীরাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম করার চিন্তা করছেন। তারা মূলত তারুণ্যনির্ভর বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করতে চান।
তাদের কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানান, সময়ের প্রয়োজনেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের ডাক এসেছিল। এই আন্দোলনের আরেকটি লক্ষ্য রাষ্ট্র সংস্কার। রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের বাইরে গিয়ে করা সম্ভব হবে না। তাই এখনকার মতো জনসমর্থন অব্যাহত থাকলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করা হবে। এই রাজনৈতিক দল লেজুড়বৃত্তি, গতানুগতিকতা ও পরিবারতন্ত্রের বাইরে গিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে।
এমন অবস্থায় দেশে সংস্কার আনতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা। রয়টার্সকে এমনটাই বলেন মাহফুজ আলম নামের এক শিক্ষার্থী। সরকার এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রণি-পেশার মানুষের মধ্যে লিয়াজোঁ করতে গঠিত কমিটির প্রধানের দায়িত্বে আছেন তিনি।
আইন নিয়ে পড়াশোনা করা ২৬ বছর বয়সী মাহফুজ আলম বলেন, এক মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করতে চায় শিক্ষার্থীরা। এর আগে পরিকল্পনার ব্যাপারে কোথাও বিস্তারিত জানানো হয়নি।
এ ব্যাপারে মাহফুজ আলম বলেন, ‘দুই রাজনৈতিক দলের ওপর মানুষ আসলেই ক্লান্ত–বিরক্ত। আমাদের ওপর তাদের আস্থা রয়েছে।’
এ নিয়ে সমন্বয়ক তাহমিদ চৌধুরী বলেন, তাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর মূল ভিত্তি হবে অসাম্প্রদায়িকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
তবে, অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুজন ছাত্র প্রতিনিধি এ ব্যাপারে খোলাশা করে কিছু বলেননি। এমনকি কোন পলিসি নিয়ে তাঁরা কাজ করতে চাইছেন, সেটাও জানাননি। তবে, নির্বাচন কমিশনে ব্যাপক সংস্কারের কথা বলছেন।
এ নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই আন্দোলনের স্পিরিট ছিল মূলত নতুন বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার আর থাকবে না। তা নিশ্চিত করতে গঠনগত সংস্কার দরকার। এতে কিছু সময় তো লাগবেই।’
প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা প্রতিহত করা হবে: সারজিসপ্রতিবিপ্লবের চেষ্টা প্রতিহত করা হবে: সারজিস
দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে যে দাবি জানানো হচ্ছে, তা অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিচ্ছে না বলে রয়টার্সকে বলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও পুলিশ প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়ারা। ছাত্ররা নতুন দল গঠন করেছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়নি। তবে, রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন হবে। কেননা এতদিন এই রাজনীতি থেকে তরুণদের বাদ রাখা হতো।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ। ‘ক্ষুদ্রঋণ’ ইস্যুতে তিনি বিশ্বে বেশ আলোচিত। এমনকি তাঁর এই থিওরি কাজে লাগিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, যিনি যা চান তা বাংলাদেশে করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশ্লেষক রয়েছেন। এ নিয়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল কোথাও যাচ্ছে না। যাদের উৎপাট করা যাবে না। এখন হোক কিংবা পরে, আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। আমাদের সহযোগিতা ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের ছাড়া কেউ বাংলাদেশে স্থিতিশীল অবস্থা আনতে পারবে না।’
এস এম/
Discussion about this post