পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলায় বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য মোটিফ তৈরি করা শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের মানিকগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসময় চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র তার বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ঢাবির চারুকলা অনুষদ।বুধবার (১৬ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়। শোভাযাত্রার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজনকে ভিনদেশি ফোন নম্বর থেকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানায় চারুকলা অনুষদ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা ১৪৩২ ইতোমধ্যে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে আগের দিন নস্যাৎ প্রচেষ্টার লক্ষ্য নিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় চারুকলা নির্মিত দুটি মোটিফ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তা মেরামত এবং পুনর্নিমাণ করার মাধ্যমে আনন্দ শোভাযাত্রা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফশিল্পীর বাড়ি পুড়িয়েছে দুর্বৃত্তরাআনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফশিল্পীর বাড়ি পুড়িয়েছে দুর্বৃত্তরা
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ওই একই দুষ্কৃতকারীদের হামলায় বুধবার ভোররাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় চারুকলা অনুষদের বিশিষ্ট অ্যালামনাই শিল্পী-ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তিনি অন্য শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে মোটিফ নির্মাণে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেছেন। বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা ১৪৩২ কমিটি এবং চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে আমরা এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি দ্রুত অপরাধী শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি করছি।
এছাড়াও কয়েক দিন ধরে শোভাযাত্রার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজনকে ভিনদেশি ফোন নম্বর থেকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা ধরনের কটূক্তি প্রচার অব্যাহতভাবে চলছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এর আগে আজ বুধবার ভোররাত ৩টার দিকে বাড়ির দক্ষিণ পাশে টিনশেডের একটি ঘরে আগুন জ্বলতে দেখেন পরিবারের এক সদস্য। এরপর বাড়ির লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। রাত চারটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলায় বর্ষবরণের শোভাযাত্রার জন্য বিভিন্ন মোটিফ তৈরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মানবেন্দ্র ঘোষ। তিনি দাবি করেছেন, তিনি শুধু বাঘের মোটিফ তৈরি করেছেন।
এ বিষয়ে মানবেন্দ্র বলেন, “আমিসহ আমার পরিবার জীবনের নিরাপত্তায় ভুগছি। এই মুহূর্তে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
তিনি জানান, দুই-তিনদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এসব ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। আর মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা তার বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। অগ্নিকাণ্ডে তার শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিজের তৈরি বিভিন্ন মূল্যবান চিত্রকর্ম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
পরিবারে পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িটি ছিল আধাপাকা টিনের ঘর। সেখানে মানবেন্দ্রর শিল্পকর্মের যাবতীয় সরঞ্জামাদি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন অবশিষ্ট কিছু নেই।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, “এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
এম এইচ/
Discussion about this post