বিয়ে ইসলামে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা শুধু সামাজিক বন্ধন নয়, বরং একটি ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। এই চুক্তি শুধুমাত্র পাত্র ও পাত্রীকে নয়, তাদের পরিবার ও সমাজকেও একত্রিত করে। তবে, বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামের কিছু শর্ত ও নীতিমালা রয়েছে, যা মানা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, পাত্র-পাত্রীর মতামত বা সম্মতি এখানে বড় ভূমিকা পালন করে। এই বিষয়ে ইসলামে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা বিবাহের ন্যায়সংগততা নিশ্চিত করে।
ইসলামে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পাত্র ও পাত্রী উভয়ের প্রস্তাব (ইজাব) এবং গ্রহণ (কবুল) প্রকাশ করা। যদি দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকেন অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষী থাকেন, তবে বিয়ের চুক্তি সম্পন্ন হয়।
যদিও পাত্র বা পাত্রী মন থেকে বিয়ে করতে রাজি না থাকে, বাহ্যিকভাবে ইজাব-কবুল প্রকাশ করলে সেটি বিয়ের বৈধতা প্রদান করে। ইসলামে বিধান প্রযোজ্য হয় বাহ্যিক অবস্থার ওপর। সুতরাং, বিয়ের মজলিসে সমস্ত শর্ত পূরণ করে ইজাব-কবুল হলে বিয়ে বৈধ বলে গণ্য হবে। এমন অবস্থায় যৌক্তিক কারণ ছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক প্রদানকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করে।
তবে ইসলামে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নারীর মতামত ছাড়া তাকে বিয়ে দেওয়া বৈধ নয়। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা। যে নারীকে বিয়ে দেওয়া হবে, সে কুমারী হোক বা তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা, তার মতামত বা অনুমতি নেওয়া অবশ্যই জরুরি। অভিভাবক বা পরিবারের কেউ নারীর মতামত ছাড়া তাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিতে পারে না।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস অনুযায়ী, নারীর সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি বলেছেন,
আগে বিয়ে হয়েছে এমন নারীর মতামত ছাড়া তার বিয়ে দেওয়া যাবে না। আর কুমারী নারীর অনুমতি ব্যতীতও তাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না।” সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, কুমারীর অনুমতি কীভাবে বোঝা যাবে? রসুলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন, “তার নীরবতাই তার অনুমতির প্রকাশ। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১৩৬)
যদি কোনো নারীকে তার মতামত বা সম্মতি ছাড়াই বিয়ে দেওয়া হয়, তবে সে নারী চাইলেই বিয়ের আকদ বা চুক্তি বাতিল করার অধিকার রাখে। ইসলামে এ বিষয়ে নারীদের এই অধিকার স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। নারীর ইচ্ছা ও অধিকারকে মর্যাদা দেওয়া ইসলামের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
বিয়ে একটি পবিত্র চুক্তি, যা উভয়পক্ষের সম্মতি ও ইচ্ছার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। ইসলামের নীতিমালা এই চুক্তিকে ন্যায়সঙ্গত ও কল্যাণময় করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেছে। পাত্র-পাত্রীর সম্মতি এবং অভিভাবকের দায়িত্বশীল ভূমিকা বিয়ে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে। তাই বিয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলা আমাদের সবার কর্তব্য।
এম এইচ/
Discussion about this post