ডলার সংকটের সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে প্রবাসীদের। তবে জাতীয় বাজেটে এর প্রতিফলন নেই। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জন্য ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেটে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জন্য এই বরাদ্দ প্রস্তাবে খুশি নয় কুয়েত প্রবাসীরা। প্রবাসে কারও মৃত্যু হলে মরদেহ সরকারি খরচে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করার দাবি তাঁদের।
বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোয়া এক কোটি বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। বছরে গড়ে ২২ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান এসব প্রবাসীরা। তাঁদের পাঠানো অর্থের ওপরে ভর করেই শক্তিশালী অবস্থানে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু জাতীয় বাজেটে গুরুত্ব নেই প্রবাসীদের। বরাদ্দে বরাবরই পিছিয়ে অভিবাসন খাত। বাজেটের আকার বাড়লেও বাড়ে না এ খাতের বরাদ্দ। প্রবাসীদের বড় একটি অংশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত–সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে কর্মরত যাদের বেশিরভাগ স্বল্প আয় ও সাধারণ শ্রমিক।
চলতি প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে দেশে আসা প্রবাসীদের ব্যাগেজ সুবিধা কমানো হয়েছে। বিভিন্ন পণ্যে যুক্ত করা হয়েছে শুল্ক। ব্যবহৃত দুটো মোবাইল ফোনের বেশি দেশে নিলে দিতে হবে শুল্ক।
কুয়েত প্রবাসী নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আমরা কম বেতনে চাকরি করি। দুই– তিন বছর পর পর স্বল্প সময়ের জন্য দেশে ছুটিতে যাই। স্ত্রী, সন্তান, মা, বাবা, ভাই বোনরা আবদার করে বসে মোবাইলফোনের। তাই ব্যবহারত ফোন ছাড়াও আবদার মেটাতে নিতে হয় অতিরিক্ত দুই থেকে ৩টা ফোন। এই বাজেটে আমরা নিজের ব্যবহৃত দুটো ফোন ছাড়া অতিরিক্ত মোবাইল নিলে দিতে হবে শুল্ক। এই আইন বাতিলের করা হোক।’
নাসির আরও বলেন, ‘ইউরোপ অন্যান্য দেশে নির্দিষ্ট একটা সময় প্রবাসে কাটানোর পর ভাবে প্রবাসীরা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পায়। কিন্তু সেই সুযোগ মধ্যপ্রচ্যে থাকা প্রবাসীদের নেই। এখানে বৈধভাবে ভিসা নিয়ে আসার পরেও অবৈধ হয়ে বা অন্যকোনো কারণে খালি পকেটে দেশে চলে যেতে হয়।’
‘সরকারের সহজ শর্তে বিভিন্ন ঋণের কথা বললেও বাস্তবে নানা শর্তের জালে আটকা থাকে এই ঋণ। একজন সাধারণ প্রবাসীর পক্ষে এই সুবিধা নেওয়া সম্ভব হয় না। এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় প্রবাস ফেরত সাধারণ প্রবাসীরা।’ আক্ষেপ ঝাড়েন নাসির উদ্দিন মোল্লা।
কুয়েত বাংলাদেশ কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান টিটু বলেন, ‘কয়েক বছর আগে প্রবাসীদের মরদেহ সরকারি খরচে দেশে আনা হলেও সেটা এখন বন্ধ। মধ্যপ্রাচ্যে বেশিরভাগ শ্রমিক পেশায় কাজ করে স্বল্প বেতনে। গত ১ বছরে আমরা ৩৯জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে স্বজনদের কাছে পাঠিয়েছি। দূতাবাস থেকে ১ কুয়েতি দিনারের মতো দিলেও বাকি টাকা নিজের দিয়ে এবং বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে পাঠাতে হয়।’
প্রবাসীদের মরদেহ সরকারি খরচে দেশে পাঠানোর দাবি জানান এই কমিউনিটি নেতা। দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি ডলার সংকট মোকাবিলায় রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার দাবিও জানান তিনি।
এ এস/
Discussion about this post