সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা নাটকীয়তার পর ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। এরপর জাপার একাংশের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের থেকে টাকা নিয়েছে পার্টির হাইকমান্ড। এমন অভিযোগের বিপরিতে মুখ খুললেন জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, বাংলাদেশের কোনো লোক যদি বলতে পারে আমি বা চেয়ারম্যান কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছি, তাহলে পদত্যাগ করব। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, টাকা না পাওয়ায় মনের ব্যথায় যা তা বলছেন লাঙ্গলের পরাজিত প্রার্থীরা।
সোমবার বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ সব কথা বলেন দলটির মহাসচিব। টাকা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ভোটে ভরাডুবির জন্য জাপার পরাজিত প্রার্থীরা দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব চুন্নুকে দায়ী করেছেন। গত রোববার সভা করে লাঙ্গলের ১২২ প্রার্থী অভিযোগ করেন, সরকারের কাছ থেকে পাওয়া তহবিল তছরুপ করেছেন শীর্ষ নেতারা। প্রার্থীদের ভোটে নামিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খরচ দেওয়া দূরে থাক, খবরও নেননি। একই অভিযোগ তুলে গত বুধবার বনানী কার্যালয় ঘেরাও করেন প্রার্থীরা। ভোটের প্রচারের সময় ২১ প্রার্থী সরে যান খরচ না পেয়ে।
এ বিষয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এইগুলো হলো গল্প। অনেকেই মনে করেছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেহেতু কথাবার্তা হয়েছে, ২৬ আসন দিয়েছে, সেহেতু অনেক টাকাও দিয়েছে। শত শত কোটি টাকা দিয়েছে। প্রার্থীদের কেন আমরা টাকা দিলাম না, এটা তাদের মনের আসল ব্যথা। নির্বাচন ঠিকমত হয়নি, তারা পাস করেননি, এটা আসল ব্যথা নয়। দুই-একজন ছাড়া বাকিদের আসল ব্যথা আমরা শত কোটি টাকা পেয়েছি, তাদের দেইনি।’
চুন্নু পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, শত কোটি টাকা কে দেবে? সরকার টাকা দেবে কেন? সরকার যদি টাকা দেয় তাহলে এটা জানার বাকি থাকবে? রোববার বিশেষ সভায় চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সমালোচনা করায় প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট-২ আসনের জাপার প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব বলেন, দলের নেতা হয়ে প্রকাশ্যে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া অমার্জনীয় কাজ। তাই চেয়ারম্যান তাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। তারা এগুলো ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারতেন। সেখানে অনেক সিনিয়র নেতা ছিলেন, তারা এ ধরনের বক্তব্য দেননি।
তারা গুরুতর সাংগঠনিক অপরাধ করেছেন জানিয়ে চুন্নু বলেন, ইয়াহইয়া সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়েছিলেন। তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ক্ষমা চেয়ে দলে ফেরেন। তাঁর দলের প্রতি আনুগত্য কখনই ছিল না। শফিকুল ইসলাম পুরনো কর্মী, সন্দেহ নেই, ভালো কর্মী ছিলেন। কিন্ত যে বক্তব্য দিয়েছেন, এরপরও ব্যবস্থা না নিলে সাংগঠনিক কাঠামো ঠিক রাখা যাবে না।
পদত্যাগের দাবির প্রসঙ্গে চুন্নু বলেছেন, ‘নির্বাচনের সফলতা-ব্যর্থতার দায় চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ওপর আসে। তা নিতে রাজি ছিলাম। তার মানে এই না, প্রকাশ্যে এই ধরনের কথা বলবে। শফিকুল ইসলাম নির্বাচন করেননি, তাঁর আসনে নৌকার প্রার্থী থাকায়। যিনি নির্বাচন করেননি, তিনি অভিযোগ করতে পারেন না। ইয়াহহিয়া সামান্য ভোট পেয়েছেন। ২০১৮ সালে তাঁর আসনে নৌকা ছিল না, তখনও তিনি জামানত হারিয়েছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন ইলেকশন (নির্বাচন) করেননি, তিনি নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন নির্বাচন করার নামে। যারা অভিযোগ করছেন, তারা জীবনে ৫০০ ভোটও পাবেন না। তারা ভোট করতে চেয়েছিল, তাই মনোনয়ন দিয়েছিলাম।’
এ এস/
Discussion about this post