বিশেষ সুবিধায় আমদানি করা ৩টি বিলাসবহুল প্রাডো গাড়ি আটকে দিয়েছে মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গাড়িগুলো সংসদ সদস্য কোটায় আমদানি করা হয়। যাদের নামে গাড়িগুলো আনা হয়েছে তারা আর সংসদ সদস্য না থাকায় গাড়িগুলো আটকে দেয় মোংলা কাস্টমসের শুল্ক বিভাগ।
মোংলা কাস্টম হাউসের শুল্ক বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) মোঃ শাকিল আহম্মেদ জানান, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘কারুজেন্ট অটো’ সংসদ সদস্য কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি তিনটি আমদানি করে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে। আমদানি হওয়া গাড়ি তিনটি বিলাসবহুল প্রাডো ব্রান্ডের ২০২৩ মডেলের পাল হোয়াউট কালারের।
সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের দিনাজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ জাকারিয়া, টাঙ্গাইল-৮ আসনের অনুপম শাহজাহান জয় এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাসিমা জামান ববি গাড়ী তিনটি আমদানী করেন। তবে সর্বশেষ অফিস খোলা দিন রবিবার পর্যন্ত গাড়িগুলো ছাড় করাতে বা বিল অব এন্ট্রি দাখিল করতে কেউ আসেননি। তাই গাড়ি তিনটি ‘বি এল লক’ বা আটকে দেওয়া দেওয়া হয়েছে।
এই রাজস্ব কর্মকর্তা আরও বলেন, যারা গাড়িগুলো আমদানি করেছিলেন তারা আর সংসদ সদস্য না থাকায় এবং বিল অফ এন্ট্রি দাখিল না হলে এই তিনটি গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। তিনি উল্লেখ করেন- একেকটি প্রাডো গাড়ি আমদানি করা হয়েছিল ৯৯ লাখ টাকায়। শুল্ক দিতে গেলে একটি গাড়িরই দাম পড়বে ৯ কোটি টাকা।
মোংলা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ মাহফুজ আহমদ বলেন, দেশে সংসদ সদস্য কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় মোট ৪৪টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি হয় তিনটি। বাকি গাড়িগুলো চট্রগ্রাম ও কমলাপুর আইসিডি দিয়ে আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা এসব গাড়ির বেশিরভাগই জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয়েছে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, টয়োটা জিপ, প্রাডো, টয়োটা এল.সি স্টেশন ওয়াগটের এসব গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৩০০০-৪০০০ সিসির বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোংলা কাস্টম হাউজের একজন কর্মকর্তা জানায়, এরই মধ্যে চট্টগ্রাম, মোংলা বন্দর ও কমলাপুর আইসিডি থেকে সাতটি গাড়ি ছাড়া হয়েছে। সেগুলো আমদানি করেছেন ক্রিকেটার ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের ফয়জুর রহমান, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের গোলাম ফারুক পিংকু, নাটোর-১ আসনের আবুল কালাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের মুজিবুর রহমান মঞ্জু এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরি। আরেকজন সাবেক সংসদ সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি। কিন্তু পলাতক থাকায় ওই সকল সংসদ সদ্যস্যের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, সংসদ সদস্যরা প্রতি পাঁচ বছরে একবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারেন। এ ধরনের গাড়ির ওপর কর ৮১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে তবে এমপিদের তা দিতে হয় না।
ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার একদিন পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সংসদ ভেঙে দিলে সংসদ সদস্যরা সংসদে তাদের সদস্যপদ এবং করমুক্ত গাড়ি আমদানীর মতো সুযোগ-সুবিধাও হারান।
এস এম/
Discussion about this post