দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরবৈরী পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ফের বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। একদিকে জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলা, অন্যদিকে সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহম্মদ আসিফ খোলাখুলি হুমকি দিয়ে জানিয়েছেন, ভারত যদি সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ আটকে দিতে কোনো বাঁধ নির্মাণ করে, তাহলে পাকিস্তান সরাসরি সামরিক হামলা চালাবে এবং সেই স্থাপনা ধ্বংস করে দেবে।
গত ২২ এপ্রিল, মঙ্গলবার ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পেহেলগাঁও জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলা ঘটে। কাশ্মিরভিত্তিক লস্কর-ই তৈয়বার সহযোগী সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’-এর বন্দুকধারীরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়, এতে ২৬ জন পুরুষ নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হন। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করে। জবাবে নয়াদিল্লি সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে, পাকিস্তানি কূটনীতিকদের দেশে ফেরত পাঠায় এবং ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলসহ একাধিক কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এই প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার পাকিস্তানের টিভি চ্যানেল জিও নিউজের ‘নয়া পাকিস্তান’ অনুষ্ঠানে খাজা আসিফ বলেন, “শুধু বন্দুক বা কামানের গোলাই আগ্রাসনের একমাত্র উপায় নয়, পানি বন্ধ করাও একপ্রকার মানবিক আগ্রাসন। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ তৃষ্ণা ও ক্ষুধায় মারা যেতে পারে।” তিনি সতর্ক করে দেন, ভারত যদি সিন্ধু নদের গতিপথ আটকাতে কোনো রকম বাঁধ নির্মাণ করে, তাহলে পাকিস্তান তা সামরিকভাবে গুঁড়িয়ে দেবে। যদিও তিনি জানান, পাকিস্তান আপাতত আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মোকাবিলা করছে এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এদিকে ইসলামাবাদ পেহেলগামের হামলার দায় অস্বীকার করলেও, ভারত-পাকিস্তান উভয়ই এখন একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাকিস্তান ভারতের জন্য আকাশ ও স্থলসীমা বন্ধ করে দিয়েছে, ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত করেছে।
এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ এশিয়ায় ফের যুদ্ধের আশঙ্কা ঘনিয়ে উঠেছে। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের শীর্ষ সেনা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। যদিও ভারত এখনো কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি, পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনে করেন, “যুদ্ধের হুমকি এখনও কেটে যায়নি।” এই অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপ ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কারণ একটি ভুল সিদ্ধান্ত গোটা উপমহাদেশকে সংঘর্ষের আগুনে ঠেলে দিতে পারে।
সূত্র : জিও নিউজ
এস এইচ/
Discussion about this post