পাকিস্তানি পুরুষদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ বেশ কয়েকজন ভারতীয় নারী আত্তারি-ওয়াগা সীমান্তে আটকা পড়েছেন। গতকাল শুক্রবার ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) কর্মকর্তারা তাঁদের সীমান্ত পারাপারে বাধা দেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ওই নারীদের প্রত্যেকের কাছে ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে। তাঁরা পাকিস্তানে শ্বশুড়বাড়িতে যাওয়ার জন্য সীমান্ত পার হচ্ছিলেন।
গত ২২ এপ্রিল ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার জেরে ভারত সরকার পাকিস্তানীদে ভারতে ছেড়ে যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। ওই সময়সীমার মধ্যে ২৮৭ জন পাকিস্তানি নাগরিক ভারতীয় সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তানে চলে গেছেন। অন্যদিকে একই সময়ে ১৯১ জন ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তান থেকে ভারতে ফিরে আসেন।
এরপর গতকাল বেশ কয়েকজন ভারতীয় নারী ভারত–পাকিস্তানের আত্তারি-ওয়াগা সীমান্তে আটকা পড়লেন।
আটকে পড়া নারীদের মধ্যে ৩৮ বছর বয়সী ওয়াশিন জাহাঙ্গীর নামের এক নারী রয়েছেন। তিনি জানান, প্রায় এক মাস আগে তিনি তাঁর বোন ও দুই ভাতিজিকে নিয়ে হাঁপানির চিকিসার জন্য ভারতে এসেছিলেন। পাকিস্তানের করাচিতে তাঁর শ্বশুড়বাড়ি।
ওয়াশিন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার স্বামী ও দুই ছেলে সীমান্তের ওপারে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। পাকিস্তান আমাকে অর্ধেক নাগরিকত্ব দিয়েছে। আমার কাছে সমস্ত কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও আমাকে আটকে দেওয়া হয়েছে।’
ওয়াশিন জাহাঙ্গীর আরও জানান, ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা জানার সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রায় ১ লাখ রুপি খরচ করে রাজস্থানের যোধপুর থেকে আত্তারিতে ছুটে এসেছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমরা পেহেলগাম হামলায় মর্মাহত, কিন্তু হামলাকারীদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও আমাদের কেন হয়রানি করা হচ্ছে?’
রাজস্থানের যোধপুর থেকে আসা ওয়াজিদা খানকেও বিএসএফ কর্মকর্তারা তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট দেখে আটকে দিয়েছেন। ওয়াজিদা বলেন, ‘দশ বছর আগে পাকিস্তানে আমার বিয়ে হয়েছে। সাত ও আট বছর বয়সী আমার দুটি সন্তান রয়েছে। দুজনই পাকিস্তানের নাগরিক। আমাকে আটকে দিয়ে তাদের একা পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
ওয়াজিদা খান আরও বলেন, ‘যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। তবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা উচিত নয়।’
সূত্রের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, পাকিস্তানী সীমান্তরক্ষী বাহিনীও পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী নারীদের ভারতে প্রবেশ করতে দেয়নি।
এদিকে চিকিৎসার জন্য পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা মানুষেরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। গত ২২ এপ্রিল দিল্লির একটি হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য ভারতে এসেছেন পাকিস্তানি নাগরিক ফিদা হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টের পর আমি ভিসা পেয়েছিলাম। আকস্মিক এই ঘটনা আমার সমস্ত পরিকল্পনা নষ্ট করে দিয়েছে। চিকিৎসার জন্য এখানে আসতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন সবই বৃথা গেল।’
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল মিনি সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত পেহেলগামের বৈসরানে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এ হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা চলছে। যে কোনো সময় এই দেশ দুটি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
এস এইচ/
Discussion about this post