নির্ধারিত সময়ের একদিন পর ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস শিরি বিবাসের মৃতদেহ হস্তান্তর করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি এ জিম্মির পরিবার।
বৃহস্পতিবার হামাস যে চারটি মরদেহ দেয়, তার মধ্যে শিরির মৃতদেহ ছিল না। এ নিয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলে হামাস নিজেদের ভুল স্বীকার করে নেয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শিরির মরদেহ নিয়ে উত্তেজনায় টলতে থাকা যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল।
শুক্রবার হামাস রেড ক্রসের মাধ্যমে একটি মৃতদেহ হস্তান্তর করার পর কিছুক্ষণ পর ইসরায়েলি মেডিকেল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ফরেনসিক দল মরদেহটির খতিয়ে দেখতে ও এর পরিচয় নিশ্চিতের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পরে শিরির পরিবারের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, ফরেনসিক দলের সদস্যরা মৃতদেহটির পরিচয় নিশ্চিত করেছে এবং এটি শিরির।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি শিরি, তার দুই সন্তান অ্যারিয়েল ও কুফির এবং ওদেদ লিফশিৎজের দেহাবশেষ পাঠাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
সে অনুযায়ী রেড ক্রসের সাহায্যে চারটি মরদেহ পাঠানোও হয়। কিন্তু পরে ইসরায়েল জানায়, তাদের কাছে যে কফিনগুলো এসেছে তার মধ্যে অ্যারিয়েল, কুফির ও ওদেদ লিফশিৎজের দেহাবশেষ থাকলেও ২০২৩ সালে স্বামী ইয়ার্ডেন ও দুই সন্তানের সঙ্গে অপহৃত হওয়া শিরিরটা নেই।
এরপরই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তির গুরুতর লংঘনের অভিযোগ তোলে।
পরে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম জিম্মির মরদেহ হস্তান্তরে গড়বড় হওয়ার কথা স্বীকার করে নেন।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক ভুল’ হতেই পারে, বিশেষত যেহেতু ইসরায়েলি বোমা হামলায় ইসরায়েলি বন্দি ও ফিলিস্তিনিদের মরদেহ মিশে গিয়েছিল, হাজার হাজার মরদেহ এখনও মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে।
“কোনও মরদেহ রাখা কিংবা আমরা যে অঙ্গীকার করি ও চুক্তিতে স্বাক্ষর করি তা মেনে না চলা আমাদের মূল্যবোধ বা স্বার্থের সঙ্গে যে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তা নিশ্চিত করছি আমরা,” বিবৃতিতে বলেন তিনি।
শিরির মৃতদেহ না পেয়ে হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তি ভাঙার অভিযোগ তুলেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও।
“শিরিসহ আমাদের সব জীবিত-মৃত জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে কাজ করবো আমরা এবং হামাস যেন চুক্তির এই নিষ্ঠুর ও জঘন্য লঙ্ঘনের জন্য চড়া মূল্য দেয় তাও নিশ্চিত করবো,” ভিডিও বার্তায় এমনটাই বলেছিলেন তিনি।
হামাস ২০২৩ সালের নভেম্বরে বলেছিল, ইসরায়েলি বিমান হামলায় জিম্মি শিরি ও তার দুই সন্তান নিহত হয়েছে।
“এই নারী ও তার সন্তানদের মৃত্যুর পুরো দায় নেতানিয়াহুর,” এমনটাই বলেছেন হামাস পরিচালিত গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তরের পরিচালক ইসমাইল আল-তাওয়াবতা।
তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তাদের গোয়েন্দা মূল্যায়ন ও মৃতদেহগুলোর ফরেনসিক বিশ্লেষণ বলছে কুফির ও ও অ্যারিয়েলকে তাদের অপহরণকারীরাই হত্যা করেছিল।
“এই দুই বালককে জঙ্গিরা খালি হাতে হত্যা করে,” বলেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র ডেনিয়েল হাগারি। তবে এ নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, জিম্মিদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
তারা এ বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
Discussion about this post