বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের মুখে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চেয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এমনই দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
সংবাদমাধ্যমটি জানতে পেরেছে দাবি করে জানায়, শেখ হাসিনা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন এবং সামরিক বাহিনী পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য লকডাউন নিশ্চিত করতে মাঠে ছিল, যাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়।
এদিকে দ্য হিন্দুকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি দাবি করে বলেন, ‘আমরা সে সময় গণভবনে উপস্থিত ছিলাম এবং ক্রমাগত এই পরিকল্পনাই করছিলাম যে কীভাবে ছাত্র বিক্ষোভের সমাধান করা যায়। তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেছিলেন, (সাবেক) প্রধানমন্ত্রীর আকস্মিক পদত্যাগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে। সে কারণেই লকডাউনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।’
মহিবুল হাসান চৌধুরী দাবি করে আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনা চীন সফরে যাওয়ার পর ঢাকার পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয় এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র নেতৃত্বাধীন সর্বাত্মক আন্দোলন তীব্র গণবিক্ষোভের রূপ নেয়। ছাত্ররা যখন ‘এক দফা : শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ দাবি করে, তখন মহিবুলকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র সমন্বয়কারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেছিলেন শেখ হাসিনা। পরে অবশ্য বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করলে সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান এবং শেষ পর্যন্ত আত্মগোপন করেন।
মহিবুল হাসান চৌধুরীর দাবি, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোভাবের ওপরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ ছাড়া গুমকাণ্ড এবং জুলাই-আগস্টে গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সম্প্রতি মোট ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে।
এর আগে গত বছরের আগস্টেই হাসিনাসহ তার মন্ত্রিসভার সব মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের লাল পাসপোর্ট (কূটনৈতিক পাসপোর্ট) বাতিল করা হয়।
এ ইউ/
Discussion about this post