সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেন মধ্যপ্রাচ্যের সোনা চোরাকারবারির নিরাপদ রুট। কখনও পায়ু পথে, কখন সোনার ডিম তৈরি করে কিংবা নেব্যুলাইজার মেশিনের ভেতরে করে নতুন নতুন কৌশলে সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে সোনা চোরাচালান করা হচ্ছে।
তবে চোরাচালানের সাথে জড়িত মূল হোতারা সবসময় টাকার প্রভাবে থেকে যাচ্ছে অধরা। গত দুই বছরে সিলেট বিমানবন্দর থানায় কমপক্ষে ১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শনাক্ত হয়নি সোনা চোরাচালানের মূল হোতারা। সিলেটে এ পর্যন্ত যতগুলো সোনার চোরাচালান ধরা পড়েছে অধিকাংশই দুবাই থেকে আসা।
কাস্টমস গোয়েন্দার এক কর্মকর্তা বলেন, সোনার চালান আমরা আটক করলেও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে পুলিশ। তাই, চোরাচালানের মূল হোতা বা নেপথ্যে থাকাদের চিহ্নিত করার বিষয়টিও তারা ভালো বলতে পারবেন।
সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, দেশে এতগুলো বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা থাকলেও কখনই ধরা পড়তে দেখা যায়নি মূলহোতাদের। কাস্টমসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটগুলোর পক্ষে মূলহোতাদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা কষ্টকর বিষয় নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও গুরুত্ব নেই।
এদিকে, শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সিলেটে বিমানবন্দরে দুবাই থেকে নিয়ে আসা চার যাত্রীর সিটের নিচে তল্লাশি করে ১০টি সোনার বারের বান্ডেল পাওয়া যায়। একইসঙ্গে বিমানের শৌচাগার থেকে চারটি সোনার বারের বান্ডেল ও ছয়টি সোনার ডিম উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা সোনার বান্ডেলের ওজন ৩২ কেজি ৬৫ গ্রাম। ছয়টি সোনার ডিমের ওজন দেড় কেজি। সর্বমোট ৩৪ কেজি ১৫ গ্রাম সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোর মূল্য ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সোনা চোরাচালান আটকের ঘটনায় কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মর্তুজা আলী বাদী হয়ে চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এদিকে, সোনা চোরাচালানের চার বাহকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার ওসি (তদন্ত) দেবাংশু কুমার দে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, চার আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিরা হলেন- মৌলভীবাজারে জুড়ী উপজেলার বড়ধামাই গ্রামের মইন উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান (৩৮), সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কামালবাজারের ইরন মিয়ার ছেলে সানুমিয়া (৩৫), হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের তালহা মো. আসকর মিয়ার ছেলে আক্তারুজ্জামান (৪০) ও একই উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মনোহর মিয়ার ছেলে মিসফা মিয়া (৪৯)।
সিলেটের এক সোনা ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সিলেটে অনেক জুয়েলারি দোকানেই চোরাচালানের সোনা বিক্রি হয়। প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় এই এলাকায় সোনার চাহিদাও বেশি। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখান থেকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারেরও সুযোগ রয়েছে।’
মোবাইল ফোনের কথোপকথনে ব্যবহার করা হচ্ছে সাংকেতিক নাম। তথ্য আদান-প্রদান আর সোনার অর্ডার দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করা হয়। জানা যায়, সোনার চোলাচালান নির্বিঘ্ন করতেই এ কৌশল অবলম্বন করছে কারবারিরা।
সিলেট বিমানবন্দরে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) যে সোনার চোরাচালান ধরা পড়েছে এতে জড়িত রয়েছেন সিলেটের ২৫ জন ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানের আরও ১০ জন। যারা বাহক হয়ে সোনা নিয়ে এসেছেন তাদেরকে আসা যাওয়ার টিকিটসহ পিসপ্রতি কমিশন দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে মূলহোতারা বিমানবন্দরে তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে সোনাসহ বাহককে টার্গেট করে বের করে দেওয়ার জন্য চুক্তি করে থাকে। চুক্তির ভাগভাটোয়ারা নিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নাখোশ হলেই বাহকসহ ধরা পড়ে চোরাচালান।
Discussion about this post