বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন, দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দাবি জোরালো হচ্ছে।স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের ১৪৭ সদস্য দেশ।একের পর এক দেশের স্বীকৃতি প্রমাণ করছে বিশ্বজুড়ে ক্রমেই জোরালো হচ্ছে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি।
গাজায় ইসরাইলের চলমান আগ্রাসনের মধ্যেই ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়েছে ১০টি দেশ। একই পরিকল্পনা করছে ইউরোপের পরাশক্তি ফ্রান্সও।এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে নিজ ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব হারায় ফিলিস্তিনিরা। এরপর যুগের পর যুগ কেবলই অধিকার হরণ আর নিপীড়নের করুণ আখ্যান। স্বাধীনতার জন্য ফিলিস্তিনিদের লড়াই শুরু হয় তখন থেকেই।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ভূরাজনৈতিক কৌশল এবং ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চার দশক পর, ১৯৮৮ সালের ১৫ই নভেম্বর, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন। রাজধানী করা হয় পবিত্র জেরুজালেমকে।
এই ঘোষণার পরপরই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ৮০টি দেশ। এর মধ্যে আরব রাষ্ট্র ছাড়াও ছিল এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার অনেক দেশ। ইউরোপীয় যারা স্বীকৃতি দিয়েছিল, তারা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল।
৯০’র দশক থেকে ২০১০ সালের মধ্যে আরও ৩২টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে। এই তালিকায় রয়েছে চীন, রাশিয়া, তুরস্ক সহ বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক পরাশক্তি।
২০১১ সালে, ইরিত্রিয়া ও ক্যামেরুন বাদে বাকি সব আফ্রিকান দেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়।২০১২ সালে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন বিপুল ভোটে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পায়। তখন ১৩৮টি দেশ নিপীড়িত এই জাতির পক্ষে অবস্থান নেয়।
বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে এক বিশাল কূটনৈতিক অগ্রগতি।
গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যেই স্পেনসহ ১০টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করেছে।সর্বশেষ মার্চ, ২০২৫ সালে, মেক্সিকো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “কয়েক মাসের মধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার মর্যাদা দেবে ফ্রান্স।”
গাজায় ইসরাইলের নির্মম আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। এরই মাঝে একের পর এক দেশের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অঞ্চলটিতে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দাবিকে নতুন করে জোরালো করেছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চে ফিলিস্তিন প্রশ্ন আজ শুধু মানবিকতার আহ্বান নয়, বরং এটি হয়ে উঠছে সার্বভৌমত্ব, ন্যায়বিচার এবং আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠার এক চূড়ান্ত পরীক্ষা।
সূত্র: https://tinyurl.com/4sbm7ymb
এম এইচ/
Discussion about this post