প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি প্রতি বছর হজ পালনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে গিয়ে থাকেন । সারা বিশ্ব থেকে ২০ লাখেরও অধিক মানুষ হজ করতে আসেন। যেখানে যে কেউ সঠিক গাইডলাইন মেনে না চললে হারিয়ে যেতে পারেন। হজের বিধি-বিধান ও সে অনুযায়ী আমল করলে সমস্যা হতে পারে হজ ও ওমরা আদায়েও।
সাধারণত বাংলাদেশ থেকে যারা যান তারা সবাই হজ ও ওমরা একসঙ্গে পালন করতে যান। হজের আগে সময় থাকলে ওমরা করেন নয়তো হজের পরে ওমরা করেন। যে যে উদ্দেশ্যেই যান না কেন হজের সফরের শুরু থেকেই বেশ কিছু বিষয় জেনে রাখতে হবে।
সফরের শুরুতে যা করবেন- হজ বা ওমরা করতে ইচ্ছুকদের ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ইহরামের নিয়ত করা ভালো। কারণ, জেদ্দা পৌঁছানোর আগেই ‘মিকাত’ তথা ইহরাম বাঁধার স্থান রয়েছে। প্রায় সবগুলো হজ ফ্লাইটে মিকাতের সীমানা পার হওয়ার সময় ইহরামের নিয়ত করার কথা বলা হয় কিন্তু ওই সময় অনেকে ভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আবার কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়েন। আর বিনা ইহরামে মিকাত পার হলে এ জন্য দম বা কাফফারা দিতে হবে। নয়তো গোনাহ হবে। তাই আগেই ইহরাম বেধে নিয়ত করা ভালো।
তবে যদি হজযাত্রী জানতে পারেন যে সৌদি আরবে তার প্রথম গন্তব্য মদিনায়, তাহলে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ইহরাম করতে হবে না। যখন মদিনা থেকে মক্কায় যাবেন তখন ইহরাম করতে হবে।
সৌদিতে পৌঁছার পর যা করবেন- সৌদি আরবে বিমানবন্দরে অবতরণের পর সেখানে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে হবে। এ সময় ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। কোনো কিছুতে ধৈর্য হারানো যাবে না। প্রয়োজনীয় কাজ শেষে মুয়াল্লিমের পক্ষ থেকে হজযাত্রীদের গ্রহণ করা হবে।
এ সময় আরবিতে লেখা মুয়াল্লিমের নম্বরসহ কবজিবন্ধনী (বেল্ট) দেওয়া হবে, তা হাতে পরে নিতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র যাতে পিলগ্রিম নম্বর, নাম, ট্রাভেল এজেন্টের নাম ইত্যাদি থাকবে তা গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
এরপর হজযাত্রীরা মক্কায় যে বাড়িতে থাকবেন মুয়াল্লিমের গাড়ি তাদের জেদ্দা থেকে সেখানে নামিয়ে দেবে। জেদ্দা থেকে মক্কায় পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। চলার পথে বেশি বেশি তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…) পড়া উত্তম।
ওমরার ক্ষেত্রে তালবিয়ার শুরু করতে হয় ইহরামের নিয়ত করার সময় থেকে এবং শেষ করতে হয় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করার সময়ে। আর হজের ক্ষেত্রে ইহরামের নিয়ত করার সময় থেকে ১০ জিলহজ বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে হয়।
মক্কায় পৌঁছার পর যা করবেন – পবিত্র মক্কা শহরে পৌঁছার পর আপনি এ দোয়া পড়বেন, হে আল্লাহ! আমাকে এ পবিত্র শহরে ইমান, নিরাপত্তা ও মঙ্গলসহকারে পৌঁছে দিন। নিরাপদে থাকার তাওফিক দিন এবং এ নগরীর সম্মান ও আদব রক্ষার তাওফিক দান করুন।
বিমানের দীর্ঘ সফরের পর শরীরে কিছুটা ক্লান্তিভাব আসাটা স্বাভাবিক। তাই জেদ্দা থেকে মক্কায় পৌঁছে থাকার জায়গায় মালপত্র রেখে ক্লান্ত থাকলে বিশ্রাম করুন। নামাজের সময় হলে সময়মতো নামাজ আদায় করুন। বিশ্রাম শেষে ওমরাহ পালন করুন, আর দলবদ্ধভাবে ওমরার নিয়ত করে থাকলে সবাই মিলে ওমরা আদায় করুন। তবে ওমরা পালনের আগে অবশ্যই ওমরার নিয়ম এবং এর ফরজ ও ওয়াজিবগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
হারিয়ে না যেতে যা করবেন- হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে মক্কায় যাওয়ার আগেই মানুষ কী কী কারণে হারিয়ে যায়, তা চিহ্নিত করুন। তাহলে হারিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির শিকার হতে হবে না। মসজিদে হারাম বিশাল এলাকাজুড়ে। প্রায় ১০০টি প্রবেশপথ রয়েছে। তা ছাড়া মসজিদে হারাম সম্প্রসারণের জন্য ভেতরে-বাইরে নির্মাণকাজ চলছে। প্রবেশপথগুলো দেখতে একই রকম হলেও নাম ও গেট নম্বর ভিন্ন। প্রবেশপথগুলোর নাম ও নম্বর মুখস্ত করে নিন।
ভিড়ের কারণে তাওয়াফ, সায়ি করতে গিয়ে হজ ও ওমরাযাত্রী বেশি হারান, তাই সঙ্গীর সঙ্গে আগেই কথা বলে নিন হারিয়ে গেলে কোথায় অপেক্ষা করতে হবে। যেমন, তাওয়াফ শেষ করে কোথায় নামাজ আদায় করবেন তা চিনিয়ে দিন। আবার সায়ি করতে গিয়ে সাফা বা মারওয়া পাহাড়ে অপেক্ষা করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, মসজিদে হারামের ৭৯ নম্বর বাদশাহ ফাহাদ প্রবেশ গেটে সব সময় ভিড় বেশি থাকে। সুতরাং এ গেটে ছাড়াও আশপাশের অন্যান্য গেটগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
হোটেলের ঠিকানা বা হোটেলের কার্ড কাছে রাখুন। সঙ্গী বা গ্রুপ লিডার বা মুয়াল্লিমের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে রাখুন। মনে রাখতে হবে, হারিয়ে যাওয়া হজযাত্রীদের পথ চিনিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মক্কা-মদিনার সবাই হেল্পফুল, মক্কায় অবস্থানকারী স্থানীয় প্রবাসী, সৌদি নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তা নিতে পারেন। যে কাউকে বললেই পথ চিনিয়ে দেবে।
আর কিছু বলতে না পারলেও শুধু বাংলাদেশ বাংলাদেশ বললেও তাকে মক্কার ইব্রাহিম খলিল রোডে বাংলাদেশ হজ অফিস কিংবা মদিনার কিং ফাহাদ ২১ নম্বর গেটের কাছে বাংলাদেশের হজ অফিসে পৌঁছে দেওয়ার লোকের অভাব হবে না। সেখানে গেলে অফিসের আইটি বিভাগ তার পরিচয় বের করে ঠিকানা মতো পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
এছাড়া সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করুন। যেখান থেকে হারিয়ে গেছেন সেখান থেকে আপনাকে খুঁজতে অন্যদের সুবিধা হবে।
এ এস/
Discussion about this post