বাবা হাজার কোটি টাকার মালিক। আছে বাড়ি-গাড়িসহ সব কিছুই। কিন্তু একমাত্র ছেলে নিজের খরচ জোগাতে কখনো জুতার দোকানে, কখনো রেস্তোরাঁয় আবার কখনোবা দিনমজুরের কাজ করছে। প্রশ্ন হলো- বাবার এত সম্পদ থাকার পরও ছেলের কেন এই করুণ অবস্থা? এর নেপথ্যে রয়েছে একটি চমৎকার গল্প।
ভারতের অন্যতম হীরা ব্যবসায়ী সাবজি ধানজি ঢোলাকিয়া। তিনি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার মালিক। এই ধনকুবেরের একমাত্র ছেলে দ্রাভ্যিয়া ঢোলাকিয়া। দ্রাভ্যিয়ার বয়স যখন ২৭ বছর তখন সাবজি ঠিক করেন ছেলেকে টাকা-পয়সার মূল্য বুঝাতে হবে।
এরপর একদিন তিনি তার ছেলেকে ডেকে বলেন নিজের যোগ্যতায় চাকরি খুঁজতে এবং নিজে উপার্জন করে কয়েক মাস চলতে। এ সময় বাবা এক টাকাও দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এমনকি চাকরিতে ঢোকার জন্য তার নাম ব্যবহার করলে সেখানে কল দিয়ে চাকরি না দিতে অনুরোধ করবেন বলেও সতর্ক করেন।
এতে শুরু হয় দ্রাভ্যিয়ার জীবন সংগ্রাম। এই অফিস থেকে ওই অফিসে ঘুরতে থাকেন তিনি। একের পর এক রিজেক্ট হতে থাকেন দ্রাভ্যিয়া। শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে একটি জুতার দোকানে সেলসম্যানের কাজ নেন তিনি। এর কিছুদিন পর চাকরি জোটে ম্যাক ডোনাল্ডসে। সেখানে তার মাসিক বেতন ধরা হয় মাত্র ৪ হাজার টাকা।
কিন্তু এই স্বল্প টাকা দিয়ে পুরো মাস চলা সম্ভব না। তাই রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি একটি কল সেন্টারেও চাকরি নেন দ্রাভ্যিয়া। প্রতিদিন ২০০ টাকা বাড়ি ভাড়া দিয়ে এবং যাতায়াত খরচ মিটিয়ে তার হাতে ৩০ থেকে ৪০ টাকাও থাকত না। কিন্তু ছেলের এমন দুর্দশাতেও মন গলেনি ধনকুবের বাবার।
এভাবে কয়েক মাস কাজ করার পর দ্রাভ্যিয়ার চাকরি জোটে একটি কেক-পাউরুটির দোকানে। একদিন সেখানে আসা এক ব্যক্তি তাকে চিনে ফেলেন। এরপর ভারতের বড় বড় পত্রিকায় খবর প্রচার হয়। সাড়া পড়ে যায় গোটা ভারতে।
কিন্তু সাবজি ঢোলাকিয়া কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? এর কারণ হলো- তিনি এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মাত্র চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর দারিদ্র্যের কারণে আর পড়াশোনা করতে পারেননি। এরপর নিজের ভাগ্য গড়তে শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম।
১৯৯২ সালে তারা ৩ ভাই মিলে শুরু করেন হিরের ব্যবসা। বর্তমানে গোটা ভারতে তাদের হাজারের বেশি হিরার দোকান রয়েছে। সেখানে কাজ করেন সাড়ে ৬ হাজারের বেশি কর্মচারী। কয়েক বছর আগে দীপাবলির সময় নিজেদের সবচেয়ে পুরনো ও বিশ্বস্ত কর্মচারীদের গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন ডোলাকিয়া।
সাবজি ঢোলাকিয়া ছেলেকে যে কঠিন পরিস্থির মুখোমুখি করেছিলেন তিনি এর চেয়েও বেশি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। সাবজির এমনও দিন গেছে, তিনি একটি মিষ্টি আর এক পিস পাউরুটি খেয়ে ঘুমাতে গেছেন। তাই তিনি ছেলেকে বাস্তবতা শিখাতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সাবজি ডোলাকিয়ার এমন সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন অনেকে। তারা বলেছেন- ছেলেকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাবা যা করেছেন তা অন্যদের জন্যও শিক্ষা।
এ এ/
Discussion about this post