মানুষের শরীর, জীবনযাপন ও সব কাজকর্মের কেন্দ্র হলো অন্তর।অন্তর পরিশুদ্ধ হলে সব কিছু পরিশুদ্ধ হয়ে যায়।পরিশুদ্ধ অন্তর মুমিনকে খাঁটি মুমিনে পরিণত করে। নবীজি (সা.)-এর প্রিয় মানুষ ছিলেন, পরিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী ব্যক্তিরা। নবীজি (সা.)-এর চোখে তারা ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি।
নোমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
শরীরের মধ্যে একটি মাংসের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই খারাপ হয়ে যায়। সে মাংসের টুকরোটি হলো অন্তর। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
হাফেজ ইবনে রজব (রহ.) বলেন, মানুষের অন্তর যখন ঠিক হয়ে যায়, তখন তার কাজও ঠিক হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, অন্তর পরিশুদ্ধ হলে কাজকর্ম পরিশুদ্ধ হয়ে যাওয়া অপরিহার্য। অন্তরের পরিশুদ্ধির প্রভাব মানুষের বাহ্যিক আচরণ ও কাজের ওপর পড়ে। কারো ভেতর যতো বেশি পরিশুদ্ধ , তার কাজ ততো বেশি উত্তম ও উন্নত হতে থাকে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকেও এটা বোঝা যায়। ওই হাদিসে রাসুল (সা.) অন্তর ও আমলকে একসাথে উল্লেখ করেছেন। রাসুল (সা.) বলেন,
আল্লাহ তোমাদের রূপ বা সম্পদ দেখেন না, তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল। (সহিহ মুসলিম)
মানুষ যত ভালো কাজই করুক, যত বেশি ইবাদত করুক না কেনো , তার অন্তরে যদি ঈমান না থাকে, সে যদি ইখলাসের সাথে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই ইবাদত না করে, তাহলে তার ভালো কাজের কোনো মূল্য নেই। লোক দেখানো ইবাদত হারাম। হাদিসে এসেছে লোক দেখানো ইবাদতকারী যদি রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত ) গুনাহ থেকে তওবা না করে, তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহ সব মানুষের সামনে তাকে তার আমলের সওয়াব দেখাবেন এবং তার রিয়ার কথা প্রকাশ করে তাকে ওই সওয়াব থেকে বঞ্চিত ঘোষণা করবেন। সে সবার সামনে লজ্জিত হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন,
যে ব্যক্তি লোক-শোনানো ইবাদত করে আল্লাহ তার ইবাদতের উদ্দেশ্য মানুষকে শোনাবেন। যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ইবাদত করে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার ইবাদতের উদ্দেশ্য মানুষকে দেখাবেন। (সহিহ বুখারি)
হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘যে ব্যক্তি কোনো শিরক করা ছাড়া আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে (মৃত্যুবরণ করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শিরক করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম ৯৩)
তাই আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য অন্তর পরিশুদ্ধ করা। অন্তরে এক আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান ও ইখলাস দৃঢ় করা। শিরক, রিয়া অন্তরে থাকলে তা থেকে অন্তরকে মুক্ত করা। অন্তর পরিশুদ্ধ হলে আমাদের জীবন পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে।
এস আই/
Discussion about this post