গত ১৫ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান আলোচিত নারী উদ্যোক্তা রোবাইয়াত ফাতিমা তনির স্বামী শাহাদাৎ হোসাইন। তিনি ব্যাংককে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তনির স্বামীর মৃত্যুতে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করেন। অনেকেই নানাভাবে তনিকে কটাক্ষও করেন। কটাক্ষের কারণ ছিল হাসপাতালে স্বামীর সঙ্গে তোলা তার একটি ছবিকে কেন্দ্র করে। ওই ছবিতে দেখা যায়, তনি তার স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এসময় তার ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক ছিল।
এসব নিয়ে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। বানান সমস্যা ও বাক্যের কিছু অসঙ্গতিসহ স্ট্যাটাসের বিশেষ কিছু অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘মিশন সাকসেসফুল’ এই ছবিটা পোস্ট করে যারা এসব লিখেছেন, আমি জানতে চাই কি মিশন সাকসেসফুল? একটা প্রমাণ দেখাতে পারলে ফেসবুকে আর চেহারা দেখাবো না। হিংসুটে লোকদের কাজ হচ্ছে অন্যের পেছনে পরে থাকা। আমার স্বামী ১০১ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল, প্রথমদিকে আমি বেশিরভাগ সময় ব্যাংককে থাকতাম, কিন্তু Bumrungard Hospital-এ প্রতিদিন ১০-১২ লাখ টাকা বিল দিতে যেয়ে আমার অর্থনৈতিক অবস্থা কি হতে পারে এটা যেকোনো শিক্ষিত মানুষকে মনে হয় না বুঝাতে হবে।
এরপর হাসপাতালে আমার হাজব্যান্ডের সাথে ২৪ ঘণ্টা থাকার জন্য স্পেশাল আইসিইউ নার্স আলাদা করে এ্যপয়েন্টেড করে প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ-ব্যাংকক আসা যাওয়া শুরু করি। কারণ আমাকে সবকিছু ঠিক রাখতে হবে, এছাড়া এত বড় অংকের বিল মেটানো সম্ভব নয়। এর মধ্যে ফেসবুকে মানুষের নানা রকম উপদেশ, ভূয়া নিউজ, ট্রল এসব কিছু তো আছেই, অনেকে আমাকে ডিরেক্টলি পর্যন্ত বলছে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন। কত বড় অসভ্য হলে এসব তারা করতে/ বলতে পারছে!
এরপরে ছবির প্রসঙ্গে টেনে তনি লিখেছেন, ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ আমি সানভী এবং সারফারাজকে ব্যাংকক নিয়ে যাই, তারা যেন বছরের প্রথমদিন তাদের ড্যাডির সাথে কাটাতে পারে। এই ছবিটা বছরের প্রথম দিনের সকালে উঠে রেডি হয়ে প্রথমে হাসপাতালে তাদের ড্যাডিকে দেখে ঘুরতে নিয়ে যাই। আমি যখন ব্যাংককে একা থাকতাম তখন বেশিরভাগ সময় হাসপাতালেই থাকতাম, কিন্তু বাচ্চাদের তো সারাক্ষণ আইসিইউতে রাখা যায় না, আবার ওদের সামনে কান্নাও করা যায় না, ওরা অনেক ছোট আর সারফারাজ তো কিছুই বুঝে না, ওদেরকে সব কিছু নরমাল বুঝাতে হয়।
এছাড়া আমি যে প্রফেশনে আছি, আমাকে অনেক প্রেজেন্টেবল হয়ে ক্যামেরার সামনে আসতে হয়, শুধুমাত্র লিপস্টিক দেয়া একটা ছবি দেখে এত কিছু জাজ করে ফেললেন? আপনাদের কোনো ধারণা আছে ব্যাংককে ট্রিটমেন্ট করতে কত টাকা খরচ হয়? আর মেন্টালি ফিজিক্যালি কতটা স্ট্রাগল করতে হয়েছে আমাকে। আজকে ঢাকা তো কালকে ব্যাংকক, যেটা অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। হাজব্যান্ড, হাসপাতাল বিল, বাচ্চা, পরিবার, বিজনেস সব টেনশন আমাকে একা নিতে হয়েছে, আপনাদেরকে নয়!
নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেন তো, আপনার হাজব্যান্ড বা ওয়াইফ কোমাতে চলে গেলে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস করে কোনো মিরাক্কেলের আশায় আমার মতো এমন স্টেপ নিতে পারবেন তো? তাও আবার ওয়ার্ল্ডের সেরা হাসপাতালগুলোর একটিতে। অঢেল টাকা থাকলেও অনেকে এত সাহস দেখায় না, মানুষটার ভালবাসার গভীরতা এত বেশি ছিল প্রয়োজনে নিজের জীবনটাই দিতে পারতাম। সেই শুরু থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক যুদ্ধ করে নিজের অবস্থান তৈরি করতে হয়েছে, আমি লোভী এই কথা বলে হয়তো সারাজীবন কিছু অকর্মা লোক নিজের মনের জ্বালায় নিজেই জ্বলে পুড়ে মরবে, আমাকে আটকাইতে পারেনি আর পারবেও না ইনশাল্লাহ।
এম এইচ/
Discussion about this post