দেশের বিদ্যুৎ-কেন্দ্র এবং সার কারখানাগুলোতে ২৬ হাজার ৬৩১ কোটি টাকার গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) আওতাধীন কারখানাগুলো থেকে এ অর্থ পাবে গ্যাস বিতরণকারী ছয়টি কোম্পানি।
দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত এবং কাতার, ওমান এবং সিংগাপুর থেকে আমদানিকৃত এলএনজি পাইপলাইনে মিশিয়ে গ্যাস সঞ্চালন ও সরবরাহ করা হয়। নগদ অর্থ এবং ডলারের সংকটের কারণে গ্যাস ও খনিজসম্পদ খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলা স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রে বিদেশি উৎপাদনকারী এবং আমদানি বিল পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। দেরিতে বিল পরিশোধের কারণে জরিমানাও গুনছে সংস্থাটি। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত বকেয়া আদায়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে সার উৎপাদন করে কারখানাগুলো লোকসানে থাকায় এবং সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিপুল পরিমাণ বিল পিডিবিতে বকেয়া থাকায় বকেয়া গ্যাস বিল সরবরাহে কাঙ্ক্ষিত গতি মিলবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, দেশে বেসরকারি খাতে অর্থাৎ শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিক শ্রেণিতে গ্যাস বিল বকেয়ার পরিমাণ কমে এসেছে। বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া পড়েছে মূলত জ্বালানি গ্যাস ব্যবহারকারী সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে এবং সার কারখানাগুলোতে। গত ২৯ জুলাই জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের এক সভায় গত মে মাস পর্যন্ত হালনাগাদকৃত বকেয়া গ্যাস বিলের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। গ্রাহক পর্যায়ে দুই মাসের বিল বকেয়াকে সাধারণত সিস্টেমে বকেয়া হিসেবে বিবেচনা না করে চলতি হিসাবে ধরা হয়।
পিডিবির কাছে গ্যাস কোম্পানিগুলোর পাওনা ৭ হাজার ২১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বাকি ৯ হাজার ৭৩২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বিসিআইসির কাছে পাওনা ২ হাজার ২৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর বাইরে মামলাজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া পড়ে রয়েছে ২ হাজার ১৪৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর বাইরে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছে ৪৯২ কোটি ১ লাখ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ৪ হাজার ৮০৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে।
ঐ সভায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, পিডিবির কাছে প্রতি মাসে বকেয়ার পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত জুলাই মাসে কোনো বিল পরিশোধ করেনি সংস্থাটি। আর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়েকটি ৬৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। পিডিবির কাছে ১ হাজার ৯২ কোটি টাকা, ইজিসিবির ২ হাজার ২৪১ কোটি টাকা এবং আইপিপির কাছে ৩ হাজার ১৩৪ কোটিসহ ৬ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আশুগঞ্জ ৪০০ মেগাওয়াট (পূর্ব) কেন্দ্রটি বাদে কেন্দ্রগুলোর ১৫-১৬ মাসের বিল সমতুল্য বকেয়া রয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিসিআইসি নিয়ন্ত্রণাধীন ইউরিয়া সার কারখানাগুলোর উত্পাদিত ইউরিয়া সারে ভর্তুকি প্রদানের ক্ষেত্রে শিল্প মন্ত্রণালয় যাচাই বাছাই করে বিভাগে পাঠাবে। অর্থ বিভাগ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অর্থ প্রদান করলে বিসিআইসি পেট্রোবাংলার বকেয়া গ্যাস বিলের অর্থ পরিশোধ করবে।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, পেট্রোবাংলা তারল্যসংকটে রয়েছে। আইওসি এবং কাতার এনার্জিরও আটটি কার্গো বাবদ ২৩২ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে। যথা সময়ে বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করলে আইওসি এবং কাতার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এলএনজির অর্থ দেরিতে পরিশোধ করার কারণে পেট্রোবাংলাকে বিলম্ব মাশুল হিসেবে জরিমানা দিতে হচ্ছে।
সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক
এম এইচ/
Discussion about this post