ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে তিনটি মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু। পরে মোবাইলগুলো পুকুরে ফেলে দেন তিনি । সেই মোবাইল তিনটি উদ্ধারে ঝিনাইদহে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্ত টিম।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দার (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘গ্যাস বাবুকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তিনি তখন বলেছিলেন, মোবাইলগুলো হারিয়ে গেছে, তিনি জিডি করেছেন। কিন্তু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, একজন নেতার নির্দেশে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন। তাকে সঙ্গে রেখে একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিয়ে আলামত উদ্ধারে জোর চেষ্টা চালানো হবে। পানির মধ্যে থেকে আলামত উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ও জেলেদেরকে কাজে লাগানো হবে।’
মোবাইলগুলো দিয়েই আনার হত্যার মূল ঘাতক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া গ্যাস বাবুর সঙ্গে অসংখ্যবার কথা বলেছেন জানিয়ে ডিবির হারুন বলেন, ‘এছাড়া অসংখ্য বার্তার মাধ্যমে তারা তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। মোবাইলগুলোতে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত আছে বলে মনে করছি। না হলে গ্যাস বাবুর মোবাইলগুলো পানিতে ফেলে দেবেন কেন? মোবাইলগুলো পেলে মামলার তদন্তে অনেক সহায়তা হবে। সেজন্য মোবাইল উদ্ধার করা অনেক জরুরি।’ আলামতগুলো কেউ যেন সরিয়ে ফেলতে না পারে, সে বিষয়ে স্থানীয় পুলিশের নজরদারিতে থাকবে বলেও জানান তিনি।
সংসদ সদস্য আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের কলকাতায় যাওয়ার বিষয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সংসদ সদস্য আনারের পরিবারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। ডরিন কিছুটা অসুস্থ, এজন্য হয়তো দেরি হচ্ছে। শিগগির কলকাতায় যাবেন ডিএনএ স্যাম্পল দেওয়ার জন্য।’ আনার হত্যার মূলহোতা আখতারুজ্জামান শাহীনকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত চেষ্টা করবে বলেও জানান ডিবির হারুন।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সংসদ সদস্য আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজিম।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এ সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পাশের নিউটাউন এলাকায় সাঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি বহুতল আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
২৮ মে সন্ধ্যায় সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া নেপালে আটক সিয়ামকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে বেশকিছু হাড়গোড় পায় কলাকাতা পুলিশ। তবে এগুলো আনারের মরদেহের খণ্ডাংশ কি না সেটা এখনও নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
এ এস/
Discussion about this post