দুই দিনের জন্য মঙ্গলবার সৌদি আরব সফরে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার এই সফর দুই দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের আমন্ত্রণে তিনি এবার জেদ্দা গিয়েছেন। গত ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জেদ্দায় গেলেন।
সাধারণত ভারতের প্রধানমন্ত্রী রিয়াদেই যান। গত দুবার মোদিও সেখানেই গিয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদির সফরকালে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষার মতো ক্ষেত্রে চুক্তি হতে পারে। ১২টি এমওইউ বা সমঝোতাপত্র সই হতে পারে।
সৌদি আরব চায় তেল কেনা নিয়ে ভারত দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করুক। ভারত চায়, সৌদি আরব ভারত থেকে আরো হজযাত্রীকে হজ করতে যাওয়ার অনুমতি দিক। এই নিয়ে আলোচনার পর সৌদি আরব ভারতীয় হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়াতে রাজি হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যুবরাজ সালমানের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
এ ছাড়া ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ ইকোনমিক করিডর (আইম্যাক) নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।
মোদি যা বললেন
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ‘সৌদি আরব হলো ভারতের বিশেষ বন্ধু এবং দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক আছে। দুই দেশের অংশীদারিকে ভারত খুবই মূল্য দেয়।’
সৌদি খবরের চ্যানেল আরব নিউজকে মোদি বলেন, ‘ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের সীমাহীন সম্ভাবনা আছে।’
ভারতের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য
এ ছাড়া সৌদি আরবে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত সুহেল আয়াজ খান সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘ভারত-সৌদি আরব যোগাযোগের ক্ষেত্রে জেদ্দা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শহর।
বহু শতক ধরে জেদ্দা বন্দর থেকে দুই দেশের বাণিজ্য হয়েছে। তা ছাড়া জেদ্দা হলো হজ ও উমরাহ করতে যাওয়ার গেটওয়ে। এখান থেকেই সবাই মক্কা যান।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভারত হজযাত্রীদের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর খুবই জোর দিয়েছিল। ২০২৫ সালে ভারতীয়দের জন্য হজের কোটা ঠিক করা হয়েছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ২০ জন। এই বিষয়টি নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তারা দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। এখন ঠিক হয়েছে ভারত থেকে এবার এক লাখ ৭৫ হাজার ২৫ জন হজ করতে যেতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী মোদি ও যুবরাজ সালমান ভারত-সৌদি আরব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ মিটিংয়ের দ্বিতীয় বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।
কেন এই সফর গুরুত্বপূর্ণ?
পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্র সচদেব বলছেন, ‘অনেকগুলো কারণে এই সফর খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে। সৌদি ভারত ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ানো ছাড়াও আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ আর্থিক করিডর (আইম্যাক)।’
ভারত থেকে সমুদ্রপথে সংযুক্ত আরব আমিরাত, তারপর রেলপথে সৌদি আরব, জর্দান, ইসরায়েল হয়ে গ্রিসে যাবে এই করিডর। ভারতের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি ও যুবরাজ সালমান এই প্রকল্প নিয়ে কথা বলবেন।
রবীন্দ্র সচদেব বলেন, ‘আজ হোক বা কাল, গাজার পুনর্গঠন করতে হবে। সেখানে আইম্যাক করিডর বড় ভূমিকা নিতে পারে।’ তার মতে, ‘সৌদি আরবের হাতে অর্থ আছে। ভারতের কাছে বাজার আছে, যেখানে বিনিয়োগ করে লাভ ওঠাতে পারে সৌদি আরব। সেদিক থেকেও সফরের গুরুত্ব অপরিসীম।’
এদিকে সৌদি যুবরাজ সালমানের নিওমকে ভবিষ্যতের স্বপ্নের শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এটা ৫০ হাজার কোটি ডলারের প্রকল্প। সেখানে ভারতের প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, প্রযুক্তি, শ্রমিকদের রিয়াদের প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ ছাড়া সৌদি আরবের জেলে আড়াই হাজার ভারতীয় বন্দি আছেন। হয় ঠিকভাবে নিয়ম না জানায় বা লঘু অপরাধে তারা জেলে বন্দি। তাদের মুক্তি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে সচদেব জানিয়েছেন। তা ছাড়া অপ্রচলিত জ্বালানি, বিকল্প জ্বালানি, গ্রিন হাইড্রোজেন নিয়েও কথা হবে।
সৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির বিদ্যুৎ, বিশেষ করে পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে কথা হবে।
সোদি আরবে ২৭ লাখ ভারতীয় আছে। সে দেশে একটি যোগ প্রতিষ্ঠানও তৈরি হয়েছে। সেখানে প্রথম সৌদি যোগাচার্য নইফ আলমারওয়াল বলেছেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। মধ্যপ্রাচ্যে যোগ প্রসারের ক্ষেত্রে তা বড় ভূমিকা নিতে পারে।’
কী বলছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড
প্রধানমন্ত্রী মোদি এমন একটা সময় সৌদি আরবে গেলেন, যখন ভারতে ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) দেশডুড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
এআইএমপিএলবির মুখপাত্র সৈয়দ কাশিম রসুল ইলিয়াস বলেছেন, ‘সৌদি আরবের থেকে আমাদের কোনো প্রত্যাশা নেই। আমরা গণতন্ত্রে বাস করি। এখানে আমাদের সামনে রাস্তা আছে। গণতন্ত্র বলে আমাদের মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। আমরা আমাদের মত প্রকাশ করব।’
এম এইচ/
Discussion about this post