আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের পদ থেকে আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে অপসারণের দাবি তুলেছেন বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস চালু করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, “আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সুবিধাভোগী। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার অপসারণ চাই। নতুবা তার অপসারণের ব্যবস্থা কীভাবে করতে হয়, সেটা প্রশাসন ক্যাডারের জানা আছে।”
সভায় প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন কামালও একই দাবি তোলেন। এ সময় সভায় উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তারা তাদের দাবিতে সমর্থন জানান। পাশাপাশি এই সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার আর দরকার নেই বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা। একইসঙ্গে কমিশনের পুনর্গঠন চেয়েছেন কেউ কেউ।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, “আপনি তো পরীক্ষা দিয়ে পদোন্নতি নেননি। যেহেতু আপনি এ কাজ করেছেন, আপনি অবিলম্বে সংস্কার কমিশন থেকে পদত্যাগ করুন।”
মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগ চেয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানান তিনি।
জাকির হোসেন আরও বলেন, “বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যারা বাধা হিসেবে কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
এদিকে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ্ প্রশাসন ক্যাডারের উপর কোনো সার্জারি করতে দেব না বলে মন্তব্য করেছেন।
সভাপতি বলেন, “আমরা এক আছি এক থাকব। আমরা প্রশাসন ক্যাডারের উপর কোনো সার্জারি বা কোটা আরোপ করতে দেব না। কোনো অযাচিত সুপারিশ করলে কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে। বহিরাগত কোনো কর্মকর্তাকে আনতে চাইলে প্রতিহত করা হবে। পদোন্নতি ও পদায়নে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।”
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের যৌথ আয়োজনে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন হয়। সভায় প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কয়েকশ কর্মকর্তা অংশ নেন। বিভিন্ন জেলার ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সভায় যুক্ত হন। এ ধরনের আয়োজন এই প্রথম বলে জানানো হয়।
এই সভায় বক্তারা নতুন ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস চালু করার দাবি তুলেছেন। উপসচিব পদে শতভাগ প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি করা হয়েছে।
সভায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ তার বক্তব্যে বলেন, “এই কমিশনের প্রতিবেদন কোনো কাজে আসবে না। আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকবে।” তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মাহবুব হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন এ বি এম আব্দুস সাত্তার।
এর আগে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা কমাতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মরত কর্মকর্তাদের যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সাংবাদিকদের জানান, উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি এবং উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০% এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০% কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫% এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫% কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।
এ ইউ/
Discussion about this post