এলিজাবেথ ফিরোজা (৫০)। ছোটবেলা থেকে নরওয়েতে বড় হয়েছি। নরওয়ের বাবা-মা নাম রাখেন এলিজাবেথ। নরওয়ের আরেন্ডাল শহরে স্বামী হেনরিক ফাজালসেট আর চার সন্তান নিয়ে বাস করেন । কিছুদিন আগেই বড় ছেলে থিও বিয়ে করিছেন। এলিজাবেথ পেশায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী। আরেন্ডালেরই একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। বিয়ের পর ২২ বছর বয়সে প্রথম সন্তান প্রসবের পর নরওয়েরে চিকিৎসক আমার হিস্টরি জানতে চান। তখন থেকেই আমি আমার পরিবারকে খুঁজতে চেষ্টা করেন। সুখ আর স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন কাটালেও এলিজাবেথের মনে অন্যরকম এক হাহাকার।
এলিজাবেথ ফিরোজা জানতে পারেন তার মা বাংলাদেশি। দীর্ঘ ৫০ বছর পর মায়ের কোলে ফিরলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন স্বামী হ্যানরি। দীর্ঘদিন পর মা-মেয়ে একে অপরকে দেখে আনন্দ অশ্রু ঝরে দুজনের চোখে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) সকালে সাদা রংয়ের একটি প্রাইভেটকার নিয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে মাদারীপুরের শিবচরে আসেন এলিজাবেথ ফিরোজা ও তার স্বামী হ্যানরি। পরে শিবচরের প্রশাসন ও মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর গ্রামের তারই বংশের একমাত্র ভাতিজা সেলিম সরদারের মাধ্যমে নিজ বাড়িতে আসেন তারা। মায়ের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটানোর পর বিকেলেই স্বামীর সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় ফিরে যান এলিজাবেথ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ জুলাই ঢাকায় ননদের বাসায় শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর গ্রামের বছির সরদারের স্ত্রী ফিরোজা বেগম কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। নাম রাখেন মৌসুমী। সে-সময়ে ফিরোজা বেগমের অর্থাভাবের কারণে মৌসুমীকে রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের সমাজ কল্যাণ পরিচালককের মাধ্যমে নরওয়ের নিঃসন্তান দম্পত্তির কাছে দত্তক দেয়া হয়।
সম্প্রতি নরওয়ে থেকে শেকড়ের খোঁজে বাংলাদেশে আসেন এলিজাবেথ ফিরোজা। শুরু করেন মাকে খুঁজে পাবার এক অসম্ভব লড়াই। দীর্ঘচেষ্টার পর দেখা হয় মায়ের সঙ্গে। মায়ের সঙ্গে দেখা করার সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ নানা রকমের উপহার সামগ্রী নিয়ে আসেন এলিজাবেথ।
এলিজাবেথের মা ফিরোজা বেগম জানান, ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালে মৌসুমীর বাবা মারা যান। তখন অসহায় হয়ে পড়লে সরকারের হাতে তুলে দেই মৌসুমীকে। কিন্তু ৫০ বছর পরে মেয়ের দেখা পাব- এটা ভাবতেই পারিনি।
টিবি
Discussion about this post